সংসারের জন্য ক্ষতিকর যেসব দুশ্চিন্তা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক : সাংসারিক জীবনে পুরুষের মনে জাগা উদ্বেগগুলো সংসারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বৈবাহিক সম্পর্কের অবস্থা নিয়ে মানসিক অস্বস্তি সাধারণ একটি ঘটনা। সঙ্গীর প্রতি সন্দেহপ্রবণতা, সন্তান নেওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপেক্ষিক দূরত্ব, ঘনিষ্ঠতার অভাব ইত্যাদিকে সবচাইতে সাধারণ বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী ডা. ডানা ডর্ফম্যান। তিনি আরও বলেন, ‘এই দুশ্চিন্তাগুলো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তার মানে এই নয় যে অবহেলা করা যাবে। বরং সম্পর্কে এদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আগেই দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে, সমাধানে আসতে হবে’। সম্পর্ক-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডা. ডানা ডর্ফম্যানের বক্তব্যের আলোকে এমন আরও কিছু ধ্বংসাত্মক দুশ্চিন্তা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হলো: আর্থিক অসচ্ছলতা : সংসার বাঁধার শুরুতে আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারব কিনা এই মানসিক দ্বন্দ্ব ভুগেছেন প্রতিটি পুরুষ। ডর্ফম্যান বলেন, ‘সদ্য সন্তানের বাবা হয়েছেন এমন পুরুষদের কাছেই এই দুশ্চিন্তার কথা বেশি শুনি এবং তাতে আমি আশ্চর্য হইনা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়লে স্বভাবতই উপার্জনের উৎসগুলো নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে না পারার কারণে অনেক পুরুষ ভেতরে ভেতরে নিজেকেই দুষতে থাকেন, যা পক্ষান্তরে বাড়ায় দুশ্চিন্তার মাত্রা, নিজেকে অসহায় মনে করতে থাকেন। তবে নিজের অজান্তেই এই দুশ্চিন্তা তার বৈবাহিক সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি করতে থাকে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটাই উপায়, তা হলো আলোচনা। পুরুষরা বরাবরই তাদের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে সুখী সংসার গড়ে তোলার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো অপরসঙ্গীকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেওয়া, বিশেষত সঙ্গী যখন তার দুর্বলতার কথা স্বীকার করে। তাই আলোচনার কোনো বিকল্প নেই’। আপনি শুধুই উপার্জনক্ষম : পুরুষদের দুশ্চিন্তার পেছনে একটি বড় কারণ হলো তারা মনে করেন উপার্জন করতে পারাই পরিবারের কাছে তার মর্যাদা বজায় রাখে, বিশেষ করে সন্তানের বাবা হওয়ার পর। সামাজিক বিভিন্ন দিক এই ধারণা গড়ে ওঠার পেছনে অনেকাংশে দায়ী। ডর্ফম্যান বলেন, ‘পুরুষদের এই ধারণা ভাঙার এবং শুধু পরিবারের উপার্জনকারী নয়, একজন স্বামী, একজন বাবা হিসেবে পুরুষকে মূল্যায়ন করার পেছনে স্ত্রীদের বড় দায়িত্ব রয়েছে’। সঙ্গীর ভালোবাসা হারানোর ভয় : সংসারে সন্তান আসার পর অনেক পরিবর্তন আসে। দায়িত্ব বাড়ে। কর্তব্য পাল্টায়। আর এই সবকিছু পুরুষদের মাঝে নানান মানসিক অস্বস্তির জন্ম দেয়, মনে করেন সঙ্গীর কাছে তার গুরুত্ব কমে যাবে। ডর্ফম্যান বলেন, ‘নব দম্পতিরা প্রথমবার বাবা-মা হওয়ার পর মনে করেন তাদের নিজের চাহিদাগুলো আর পূরণ করা হবে না’। একজন স্বামী সারাদিনে ক্লান্তি নিয়ে স্ত্রীর কাছে আসেন মানসিক প্রশান্তি পাওয়ার আসায়। কিন্তু সমস্যা হলো নবজাতককে নিয়ে তার স্ত্রীর অবস্থাও বেহাল। অনেকসময় কিছুই করার থাকে না এমতাবস্থায়। ডর্ফম্যান বলেন, ‘এই পুরুষেরও তার মনের অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়া জরুরি। ঘরে যদি সুযোগ না হয় তবে ঘরের বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের আলাপ করাটা তার মানসিক শক্তি বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্ধুদের মধ্যে যাদের বাবা হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের কাছ থেকে মূল্যবান উপদেশ পেতে পারেন পুরুষরা’। স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলো হারানোর ভয় : সন্তান থাকুক আর না থাকুক, বিবাহিত জীবন দীর্ঘায়িত করতে প্রতিনিয়ত তার পরিচর্যা প্রয়োজন। কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে পুরুষের মনে ভয় জাগে যে- তার সংসার হয়তো ভাঙতে বসেছে, স্ত্রী হয়তো তার প্রতি আকর্ষণ হারিয়েছে। ডর্ফম্যান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের মতো একান্ত সময় কাটানো জরুরি। সেটা হতে পারে বেড়াতে যাওয়া, রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া কিংবা বাড়ির আশেপাশে কিছুক্ষণ হাঁটা, গল্প করা। সম্পর্কের আকর্ষণ এতে জোরালো হবে, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা পুনরুজ্জীবিত হবে’। যৌনজীবন হারানোর আতঙ্ক : দীর্ঘদিনের বিবাহিত জীবনে যৌনজীবন একসময় তার আকর্ষণ হারায়, আর সন্তান না নিলেও তা দেখা দিতে পারে। ডর্ফম্যানের মতে, ‘এই ব্যাপারটা পুরুষদের প্রচন্ড আতঙ্কিত করে তোলে। আর এই আতঙ্ক ক্রমেই তাদের দুশ্চিন্তা বাড়াতে থাকে। স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অনুভব করতে বেশিরভাগ পুরুষের জন্য যৌনসঙ্গম গুরুত্বপূর্ণ। আর নারীর যৌন চাহিদাকে জাগ্রত করতে চাই সঙ্গীর কাছাকাছি থাকা। এই বিষয়গুলো জানা থাকলে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পারবে, যা দুজনেরই অন্তরঙ্গতার চাহিদা মেটাবে। বিশ্বাসঘাতকতার ভয় : ডর্ফম্যান বলেন, ‘প্রতিটি পুরুষ এই আতঙ্কে থাকেন যে, একদিন সে তার সঙ্গীর সঙ্গে হয়তো বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলবে। পুরুষদের বুঝতে হবে, চিন্তা করা মানেই তা করে ফেলা নয় এবং অন্যকারও প্রতি আকর্ষণ অনুভব করাও দোষের কিছু নয়। এই আকর্ষণের কথা স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে যদি পুরুষ নিশ্চিত হয় যে সে কখনই এই চিন্তাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেবে না। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো মনের চিন্তাগুলো মুখে প্রকাশ করার মাধ্যমে পুরুষের অপরাধবোধ কমবে এবং তার চিন্তাগুলো কতটা ভিত্তিহীন তা সে নিজেই অনুধাবণ করতে পারবে’। সন্দেহ প্রবণতা : সঙ্গী বিশ্বাস ভাঙতে পারে- এই চিন্তা একটি সম্পর্কের জন্য প্রচন্ড ধ্বংসাত্বক। এই সন্দেহ বা দুশ্চিন্তা সামান্য অস্বস্তি হিসেবে দেখা দেয় এবং একসময় তা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে ফাটল ধরায় সংসারে। এ ব্যাপারে ডর্ফম্যান বলেন, ‘দুশ্চিন্তাগুলো কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে ভাবতে হবে। আপনার সন্দেহের উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে, শুধুই আন্দাজ হলে বা মনের সন্দেহ হলে চলবে না। উপযুক্ত কারণ থাকলে আলোচনা করতে হবে। তবে যদি ভিত্তিহীন সন্দেহ হয় এবং আপনি তা নিশ্চিত হতে পারেন তবেই এই সন্দেহ প্রবণতা থেকে মুক্তি মিলবে’। নিজের জন্য সময় না পাওয়ার আশঙ্কা : ডর্ফম্যান বলেন, ‘পুরুষ তার ব্যক্তিগত সময় নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বৈবাহিক সম্পর্ক, সন্তানের লালনপালন, কাজ ইত্যাদি মিলিয়ে পুরুষ একসময় নিজেকেই হারিয়ে ফেলে, নিজেকে সময় দেওয়ার সময় হয় না। এমতাবস্থায় বিরতি নিতে হবে, সীমারেখা তৈরি করতে হবে। আর বুঝিয়ে দিতে হবে এই সীমারেখা দায়িত্ব এড়ানো নয় বরং দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার উপায়। নিজের জন্য একান্ত সময় পুরুষের নিজেকেই বের করে নিতে হবে’।