বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন : প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই এদেশের প্রথম শাসক, যিনি এই মাটির সন্তান।  তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন।  এই স্বল্প সময়েই রাষ্ট্রের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন।  রাষ্ট্রের সব অঙ্গ গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছিলেন।
রবিবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।  আলোচনা সভায় দলের নেতারা অবস্থান নেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।  আর প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তাতে সংযুক্ত হন।
দেশ স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম এবং দেশ গঠনে তাঁর বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।  জাতির জনকের ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে দেশ ভাগের পর তাঁর রাজনীতি এবং বিশেষ করে জেল জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মৃত্যুর মুখেও বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতাই চেয়েছেন।  জাতির জন্য আমাদের মহান নেতা জীবন দিয়ে গেছেন।  কিন্তু তার আগে তিনি দেশ গঠনের কাজে হাত দিয়েছিলেন।  সব দিকে (সেক্টর) কাজ শুরু করেছিলেন।  আজ সরকার চালাতে গিয়ে যখন এসব দেখি, আশ্চর্য হয়ে ভাবি- তিনি কী দূরদর্শীতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন।  জাতির পিতা এই জাতিকে ভালোবেসেছেন।  আমাদের একটাই চিন্তা যে, সেই জাতির কল্যাণ করা, তাদের জীবন সুন্দর করা।  এটাই আমাদের লক্ষ্য।  আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা যে, এ জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে।  স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, আজকে তারাই ব্যর্থ।  আজকের বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে।  এই মর্যাদা ধরে রেখে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো এবং জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো।  বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ-মর্যাদাশীল রাষ্ট্র’।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত রেখে দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন কীভাবে হবে, সেই পরিকল্পনায় ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি।  প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে, সেটা দিয়েছি।  ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শত বছর উদযাপন হবে।  আগামী প্রজন্ম কীভাবে তা উদযাপন করবে, সেই কথা চিন্তা করে আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।  সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।  দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।  সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস এগুলোর হাত থেকে দেশকে মুক্ত রেখে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান কারাগারে বন্দি থেকে মুক্ত হওয়ার পর লন্ডন হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে সরাসরি পরিবারের কাছে যাননি।  সবার আগে তিনি রেসকোর্স ময়দানে ছুটে গিয়েছিলেন দেশবাসীর কাছে।  সেখানে দেশের মানুষের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে তারপর আমাদের কাছে যান’।
বক্তৃতা করার সময় বঙ্গবন্ধুর হাতে কোনো লিখিত বক্তব্য না থাকলেও তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেওয়া ভাষণে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার সব নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।  আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘একটা মানুষ জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে, মানুষকে কতটা ভালোবাসলে, এভাবে আত্মত্যাগ করতে পারেন, এভাবে মানুষের কথা বলতে পারেন, তার প্রমাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  এ দেশকে তিনি চিনতেন-জানতেন ও ভালোবাসতেন এবং দেশের কল্যাণের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন’।
জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে সবাইকে তাঁর আদর্শ মেনে দেশ গঠনে মনোযোগী এবং জনকল্যাণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
গণভবন প্রান্তে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।  বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।  আরও বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান, আবু আহমেদ মান্নাফী, এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ