কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে দু’পক্ষের গোলাগুলি, একজন নিহত

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
কক্সবাজারের টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।  রবিবার (১০ জানুয়ারি) ভোররাত ৩ টার দিকে টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ে চাকমারকুল ২১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তি ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা।  তার নাম নূর হাকিম, বয়স ২৭।  তবে নিহতের শরীরের কোথাও গুলির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।  গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ির সময় তিনি পড়ে গিয়ে মারা যেতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছে আর ১০-১২ জনের মতো। তারা সবাই ছুটোছুটি করতে গিয়েই কমবেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।  কারো শরীরের কোথাও গুলির চিহ্ন নেই।  আহতদের বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্যা চিলড্রেনের অধীনে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ক্যাম্পের ভেতরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটতে পারে।  তবে এর পেছনে কারা জড়িত সেটা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে বলে জানায় পুলিশ।
এপিবিএন ১৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, “রাত তিনটার দিকে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় যে পুলিশ সদস্যরা পাহারায় ছিলেন, তারা গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান।  মানুষের শোরগোলের শব্দও পাওয়া যাচ্ছিল।  পরে ভোরের দিকে ক্যাম্পের ভেতর থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়।  এছাড়া আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।  কারও গায়ে কোনো গুলির আঘাত নেই।  আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি’।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়েরের কথা রয়েছে।  সেখানে কাউকে অভিযুক্ত করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কের মধ্যে আছেন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা।
গত ৮ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের দুটি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে অন্তত একজন নিহত এবং আরো একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।  এর আগে, ৪ ও ৬ অক্টোবর দুটি পৃথক গোলাগুলির ঘটনায় ৬ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।  পুলিশ প্রত্যেকবারই আধিপত্য বিস্তারকে সংঘর্ষের কারণ বলে উল্লেখ করেছিল।  অক্টোবরে পর পর দুটি সংঘর্ষের ঘটনায় পরে র‍্যাব-১৫ এর একটি দল চাকমারকুল ক্যাম্প থেকে অস্ত্রসহ ৯ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে বলে খবর প্রকাশ হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।  এই সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপগুলোর অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে টেকনাফের পাহাড়ে লুকানো অস্ত্রের কারখানা খুঁজে পায় র‍্যাব-১৫, সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে নয় জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র‍্যাব।
পুলিশ এবং র‍্যাব-এর ভাষ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের গ্রুপগুলো ক্যাম্পের ভেতরে নানা অপরাধ করে গহীন পাহাড়ে লুকিয়ে যায়।  তাদের মতে, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ সন্ধ্যার পর ক্যাম্পগুলোতে তৎপর হয়।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান আরো জোরালো করা হবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
এদিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকটের মধ্যেই সম্প্রতি দুই দফায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।

ডিসি/এসআইকে/এফআর