জায়েদ খান ‘ধোঁকা দিয়ে’ শপথ নিয়েছেন : ইলিয়াস কাঞ্চন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চিত্রনায়ক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের রায়ের ‘ভুয়া সার্টিফায়েড কপি’ দেখিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে শপথ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন।
জায়েদ খানের পক্ষে দেওয়া হাই কোর্টের রায়ের পর গত শুক্রবার বিকালে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান ইলিয়াস কাঞ্চন।  তার দুই দিন পর সোমবার (৭ মার্চ) রাতে এফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে ইলিয়াস কাঞ্চন জানালেন, শপথ নেওয়ার আগে ‘ভুয়া সার্টিফায়েড কপি’ দেখিয়েছেন জায়েদ খান; ফলে তার শপথের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকছে না।  তিনি বলেন, ‘শপথ নেওয়ার আগে একটি সার্টিফায়েড কপি দেখিয়েছিলেন জায়েদ খান।  পরে তার ফটোকপি জমা দিতে বললে তিনি আরেকটি সার্টিফিকেটের ফটোকপি জমা দিয়েছেন।  শপথ নেওয়ার জন্য হাই কোর্ট থেকে তার পক্ষের রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেখায়নি।  শপথ নেওয়ার জন্য ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন।  সত্যের বিপরীতে গিয়ে তিনি এই কাজটি করেছেন।  শিল্পী সমিতির সভাপতিকে ধোঁকায় ফেলেছেন।  শিল্পী সমিতিকে ধোঁকায় ফেলেছেন’।
শপথ নেওয়ার পর শিল্পী সমিতির বৈঠকেও অংশ নিয়েছিলেন জায়েদ খান; সেই বৈঠকের কার্যকারিতা থাকছে না বলে জানান ইলিয়াস কাঞ্চন।  তিনি বলেন, ‘সেহেতু জায়েদ সাহেবের শপথ কোনোভাবেই আর গ্রহণযোগ্য নয়।  আসল সার্টিফিকেট কপি না দেওয়ার কারণে সেই বৈঠকও বৈধ নয়।  সেকারণে সেইদিনের মিটিং ডিসমিস করলাম।  সেটা এখন আর কার্যকরী না।  জায়েদ সাহেবের শপথকে আমি গ্রহণ করলাম না’।
শিল্পী সমিতিকে ‘ধোঁকা দেওয়ায়’ জায়েদ খানের বিরুদ্ধে শিগগিরই জরুরি বৈঠক ডেকে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও করেছেন সভাপতি।
বিষয়টি নিয়ে জায়েদ খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

জায়েদ খান ছাড়াও সেইদিন মনোয়ার হোসেন ডিপজল, অরুণা বিশ্বাস, জয় চৌধুরীও শপথ নিয়েছেন।  তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই বলে জানান কাঞ্চন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয় গত ২৮ জানুয়ারি, পরদিন ঘোষিত ফলে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চনকে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  ঘোষিত ফলে দেখা যায়, জায়েদ খান হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ১৩ ভোটে হারিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন প্যানেলের নিপুণকে।  নির্বাচনের সময়ই টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেছিলেন নিপুণ।  তাতে সাড়া না পেয়ে তিনি আপিল করেন।
তার আপিলে ভোট পুনর্গণনা হলেও তাতে ফল একই থাকলে নিপুণ সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনঃভোটের দাবি তোলেন।  সেখানে তিনি অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকিও দেন।  পরে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করেন তিনি।  জায়েদের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথা জানিয়ে আপিল বোর্ড তার প্রার্থিতা বাতিলের ঘোষণা করে।  শপথ নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন নিপুণ।
কিন্তু জায়েদ খানের আবেদনে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয় হাই কোর্ট।  জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত কেন ‘বেআইনি’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে আদালত।  পরে হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ।  আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি তখন ওই পদে ‘স্থিতাবস্থা’ জারির আদেশ দেন।  পরে আপিল বিভাগ তা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।
সেই সঙ্গে জায়েদ খানের রিট আবেদনে যে রুল জারি হয়েছিল, হাই কোর্টকে তা নিষ্পত্তি করতে বলে সর্বোচ্চ আদালত।  সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে হাই কোর্ট বুধবার নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দেয়, যা রবিবার স্থগিত হয়ে যায়। 

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ