৩ দাবিতে গণভবনে সোহেল তাজ

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনসহ তিন দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
গত বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক থেকে পদযাত্রা যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেখানে দুই নম্বর দাবিতে ছিল, ‘৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে’।  ১০ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ঠিক থাকলেও ৩ নভেম্বর বা জেল হত্যা দিবসকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা দাবি থেকে সরে এসেছেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভবনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে পদযাত্রা শুরু করেন তিনি।  সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন অনুসারী।  বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে গণভবনের ফটকে পৌঁছান তিনি।  সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন সোহেল তাজ।
সরকারপ্রধানের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন তার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু।
স্মারকলিপি পেশ করার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।  নিজের কর্মসূচি পালন নিয়ে সন্তুষ্ট জাতীয় চার নেতার অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ সন্তান সোহেল তাজ।  তিনি বলেন, আমি আমার কর্মসূচি পালন করেছি।  গণভবন থেকে খুবই চমৎকারভাবে আমাদের রিসিভ করা হয়েছে।  আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্মারকলিপিটা পেশ করেছি।  ওনার রিপ্রেজেন্টেটিভরা সেটি গ্রহণ করেছেন।
দাবি পূরণ নিয়ে কতটা আশাবাদী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আশা প্রকাশ করছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একমাত্র ব্যক্তি বাংলাদেশে, যিনি এই তিনটি দাবি বাস্তবায়ন করতে পারবেন।  আমার সম্পূর্ণ আস্থা ওনার ওপর আছে।  তিনটি দাবি অতিসত্ত্বর তিনি পূরণ করবেন’।
দাবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমার প্রথম দাবি, এই মুজিবনগর দিবস বা বাংলাদেশের প্রথম সরকার যেদিন গঠিত হয়েছে, ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা করতে হবে’।
দ্বিতীয় দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।  এই জাতীয় চার নেতা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন সেদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি।  আজকে আমি মনে করি, এই চার মহান নেতার স্মরণে আমাদের এই ৩ নভেম্বর, যেটাকে আমরা জেল হত্যা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি, এই জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করতে হবে’।
তৃতীয় দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের জীবনী ও ইতিহাস আমাদের সব পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে অতিসত্ত্বর। কারণ আমি মনে করি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যদি কোনো ফাঁক থাকে, স্বাধীনতাবিরোধীরা সেই ফাঁক পূরণ করার সুযোগ পাবে’।
গত বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিন দফা দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে দেশবাসীকে এখন শরীর চর্চায় উৎসাহী করতে কাজ করা সোহেল তাজ।  তিনি জাতীয় চার নেতার মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে।  তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাজউদ্দীনের আসন গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হন।  ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের মন্ত্রিসভা গঠন হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ পান সোহেল তাজ।  তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অভিমান করে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেন।  পরে তার আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় বোন সিমিন হোসেন রিমিকে।  তিনি এখনও সেই আসনের সংসদ সদস্য।
২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে আগে আবার সোহেল তাজ আলোচনায় আসেন।  তিনি রাজনীতিতে ফিরছেন- এমন গুঞ্জনও তৈরি হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাতের পর।  এমনকি আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও তিনি যোগ দেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ