গণশুমারি থেকে বাদ পড়েছেন অনেকেই

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দেশের ষষ্ঠ গণশুমারিকে ‘ডিজিটাল শুমারি’ আখ্যা দিয়ে মানুষ গণনার কাজ শেষ হলেও অনেকে রয়ে গেছেন সেই গণনার বাইরে।  গণনাকারীরা অনেক ক্ষেত্রে বাসায় বাসায় যাননি।  অনেক বাসায় না গিয়েও বাইরে দরজায় ‘গণনা হয়ে যাওয়ার স্টিকার’ লাগিয়ে দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে গণনা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ তুললে গণশুমারি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা২৪ নামের একটি অনলাইন গণমাধ্যম।
কত লোক বাদ পড়ে থাকতে পারেন, সে বিষয়ে একটি চিত্র পেতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে রাজধানীতে বিভিন্ন মহল্লার ১০০ জনের কাছে তাদের শুমারির অভিজ্ঞতা জানতে চায় তারা।  অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীতে অনেক মানুষই গণশুমারির বাইরে থেকে গেছেন।
দেশজুড়ে ১৫ থেকে ২১ জুন ষষ্ঠ ধাপের জনশুমারির কাজ হয়।  এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রমে দেশজুড়ে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী ট্যাবের সাহায্যে ৭ দিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।  বন্যাকবলিত সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত গণনা কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
গণশুমারি শেষে গত মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জনশুমারির কাজে অবহেলা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।  পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজের দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছি, এবারের মানুষ গোনার কাজে অবহেলা হয়েছে’।
সে ক্ষেত্রে প্রতি পরিবারের সদস্য যদি ৩ জন করে ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে ৩০০ মানুষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়।
অনুসন্ধানটিতে দেখা যায়, ১০০ পরিবারের মধ্যে ৭৬টি পরিবারে গণশুমারির লোকজন সরাসরি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে।  ২৪টি পরিবারে কোনো গণনাকারী যায়নি।  এদের মধ্যে ১০টি পরিবার বলেছে, পরিবারের দায়িত্বশীল লোকজনের কাছ থেকে তথ্য না নিয়ে তাদের বাসার বাইরে স্টিকার সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ রকম অভিযোগ ছিল।  এসব নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।  তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পরিবারের অন্য কেউ তথ্য দিয়ে দিয়েছে, যারা অভিযোগ করেছে তারা জানে না’। সংবাদসূত্র- নিউজবাংলা২৪
কোনো বাসায় গণনাকারী গিয়ে কাউকে না পেলে প্রতিবেশীর কাছ থেকে তথ্য নিতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।  যদি গিয়ে না পায়, তাহলে তো তাদের গণনার বাইরে রাখা যাবে না’।
গণনা না করেও বাসায় স্টিকার লাগিয়ে চলে আসার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একদিকে কাজ শুরু করে আবার সেই দিকে যাওয়ার কথা রয়েছে।  তাই হয়তো বা এ রকম হয়েছে’।
অনেকে জনশুমারির বাইরে রয়ে গেছে মন্তব্য করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ২১ তারিখের পর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালু রেখেছি।  যারা গণনার বাইরে ছিল তাদের জন্য সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে’।
গণণাকারী গেছে কি না খোঁজ নিতে যোগাযোগ করা হলে ম-২৫/২/এ, পশ্চিম মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি একটু অসুস্থ থাকার কারণে সব সময় বাসায় থাকি।  আমার বাসায় জনশুমারির লোক আসে নাই, কোনো তথ্য নেয় নাই’।
পশ্চিম হাজিপাড়ার রামপুরার বাসিন্দা শাহ আলম খান।  তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসায় শুমারির লোক আসেও নাই, কোনো স্টিকারও লাগায় নাই। ত বে আমাদের ভবনের দোতলায় স্টিকার লাগানো হয়েছে।  কিন্তু আমাদের বাসায় কেউ আসে নাই।  বাসার নিচে জনশুমারির লোক দেখেছি।  কিন্তু কেন আমাদের বাসায় আসল না জানি না’।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলার বাসিন্দা মোস্তাফিজ মিঠু বলেন, ‘আমাদের বাসায় শুমারির লোকজন এসেই তথ্য নিয়ে গেছে।  কোনো ঝামেলা হয় নাই’।
ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের বাসিন্দা নাজমুল হাসান সাগর।  তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসায় কোনো লোক আসে নাই।  স্টিকারও মারে নাই।  আমরা গণনার বাইরে রয়ে গেলাম’।
রাজধানীর শাহীনবাগের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘আমাদের বাসায় শুমারির লোকজন এসেছিল।  তথ্য নিয়েছে।  তবে আমি একটা ভুল তথ্য দিয়ে দিছি।  সেটাই আপলোড হয়ে গেছে।  পরে অবশ্যই সে নোট নিয়ে গেছে।  পরে কারেকশন করবে।  কিন্তু সেটা কারেকশন হবে কি না সে শঙ্কা তো রয়েই যায়’।
একই এলাকার বাসিন্দা সৌরভ ইসলাম সিহাব।  তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসার চারতলার একপাশ করেছে, আরেক পাশে যায় নাই।  পঞ্চম তালায় তো ওঠেই নাই।  ১২টা ফ্ল্যাটের মধ্যে ৭টা করছে।  বাকি ৫ টায় কেউ আসে নাই’।
তথ্য সংগ্রহকারী কারা
প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ‘উপজলোগুলোতে থানা নির্বাহী কর্মকর্তা- ইউএনও’র সভাপতিত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল।  সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনারকে সভাপতি করে কমিটি করা হয়েছে।  যেহেতু ডিজিটাল শুমারি হয়েছে, তাই অ্যানড্রয়েড (ট্যাব) চালাতে পারে কি না, সেটা দেখা হয়েছে।  কোথাও লিখিত পরীক্ষা আবার কোথাও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তাদের বাছাই করা হয়েছে’।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত দেশে পাঁচটি আদমশুমারি হয়েছে।  ১৯৭৪ সালে প্রথম, ১৯৮১ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে তৃতীয়, ২০০১ সালে চতুর্থ এবং ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারি হয়।
২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৮ লাখ।  ১০ বছর পর পর শুমারি হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনের মাধ্যমে আদমশুমারি শব্দটিকে পরিবর্তন করে জনশুমারি করা হয়।  আগের প্রতিটি শুমারি হয়েছিল জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে।  এবারই প্রথম বর্ষাকালে জনশুমারি হচ্ছে।
শুমারির জন্য প্রথম সময় নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি।  কিন্তু করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর ও পরে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময় নির্ধারণ করা হয়।  কিন্তু ট্যাব কেনাকাটার জটিলতার কারণে তৃতীয় দফার সময় পিছিয়ে ১৫ থেকে ২১ জুন সময় ঠিক করা হয়।  এবার শুমারিতে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী ও ৬৩ হাজার সুপারভাইজার তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ