নবম ওয়েজ বোর্ড : হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ আপিল বিভাগের

ঢাকা ব্যুরো >>>
সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে গঠিত নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশের ওপর হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি করার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ ও নোয়াব উভয়পক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এছাড়া রিট আবেদনকারী নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি মতিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন এ এম আমিন উদ্দিন এবং তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী।
গত বছরের ৬ আগস্ট সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশে দুই মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলও জারি করা হয়।
নোয়াব সভাপতি হিসেবে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ অলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আদেশ দিয়েছিলেন।
নবম ওয়েজ বোর্ড চূড়ান্ত করার বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেন মতিউর রহমান। এরপর হাইকোর্টের আদেশের ফলে ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা আটকে যায়। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতাদেশ দেন আপিল বিভাগ।
গত ৬ আগস্ট স্থিতাবস্থা জারির পাশাপাশি জারি করা রুলে শ্রম আইনের ১২৮ বিধি অনুযায়ী ‘অংশীজনদের আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে’ নবম ওয়েজ বোর্ড চূড়ান্তকরণ এবং গেজেট জারির সুপারিশ করে তা সরকারের কছে পাঠানো কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বে আইনি ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য সচিব, শ্রম সচিব এবং নবম ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
মতিউর রহমানের রিট আবেদনে বলা হয়, শ্রমবিধির ১২৮ বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ‘আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ না দিয়ে’ নবম ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যান একতরফাভাবে নবম ওয়েজ বোর্ড চূড়ান্ত করেছেন; যা ‘কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বে আইনি’। এ জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াটি একতরফা, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতমূলক। সুতরাং চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া গেজেট প্রকাশের অনুমতি দেওয়া যায় না। তাছাড়া ওয়েজ বোর্ড সংক্রান্ত বিচারাধীন একটি রিট মামলায় জবাব না দিয়ে কমিটি মজুরি কাঠামোর সুপারিশ একতরফাভাবে চূড়ান্ত করে দিয়েছে, যা আইন সমর্থন করে না। সুতরাং এটি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই করা হয়ছে বলে ঘোষণা করা উচিত।
২০১৫ সালে সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই নতুন বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেন। দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গত বছরের ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়। পরে নোয়াবের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মতিউর রহমান গত বছরের মে মাসে এ রিট আবেদন করেন।
এরপর গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। বিচারপতি নিজামুল হক ওই বছরের ৪ নভেম্বর তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদ কর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
ওই প্রতিবেদন গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে মন্ত্রিসভা তা পরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে ওই সময়কর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দেয়। নতুন সরকার গঠনের পর ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারির মন্ত্রিসভা বৈঠকে আগের মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি করে সরকার।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ