চট্টগ্রামে গণপরিবহনে দেড়গুণ বেশি ভাড়া আদায়, নজরদারি ছিল না কারোরই

যাত্রীর মোবাইলে ধারণ করা ছবি।

মো. নুর উদ্দিন, নগর প্রতিবেদক >>>
‘একে খান থেকে আন্দরকিল্লা যাবো।  প্রায় ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম।  কিছু সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া চায় ২৫০-৩০০।  রিকশা যেতেই চায় না, যারা যেতে চাইলো তারাও ভাড়া হাঁকলো ২০০ টাকা।  অগত্যা উঠলাম ৪ নম্বর বাসে।  উঠা-নামা ২০ টাকা।  বাসের ভিতরে গিয়ে ওঠার পর দেখি নরমাল সময়ের মত যাত্রী দাঁড়িয়ে নেয়া হচ্ছে।  পাবলিক ভাড়াও বেশি দিচ্ছে।  এই হলো স্বাস্থ্যবিধি!  প্রতিবাদ করলাম; কিন্তু কারো সাড়া পেলাম না।  এই হলো বাংলাদেশ। সময় ১০.১৫, গাড়ি নাম্বার চট্ট-মেট্রো- জ ১১- ১৯৭৯’।
উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম নগরের একে খান থেকে গণপরিবহনের বাসে ওঠা যাত্রী মো. রাকিব হাসান।  তিনি তার ফেসবুকে বাসে চড়ার সময় বাসটির ভেতরকার পরিস্থিতিতে তোলা একটি ছবিও শেয়ার করেন।
সরকারি লকডাউন তুলে নেয়ার পর শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালনার অনুমতি দেয় সরকার। আজ রবিবার (৩১ মে) থেকে কার্যকর হয় এই সিদ্ধান্ত।  ১৪টি শর্ত দিয়ে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও চট্টগ্রামে প্রথমদিনেই সেই ভাড়া শতভাগেরও বেশি আদায় করা হয়েছে।  বাসের পাশাপাশি থাকা দুইসিটের একটিতে যাত্রী বসিয়ে অপরটি খালি রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি কোনো পরিবহনেই।  বরং সবগুলো সিটে যাত্রী বসানো শেষেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তোলা হয়েছে উপস্থিত যাত্রীদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই, অতিরিক্ত যাত্রীদের দাঁড় করিয়ে নেয়া হয়েছে নিউ মার্কেট পর্যন্ত।
একে খান মোড় থেকে লালখান বাজারে যেতে ৪ নম্বর গাড়িতে ওঠেন হাফিজুর রহমান।  তার অফিস আজ থেকে শুরু।  অন্যান্য সময় একে খান থেকে লালখান বাজার মোড়ে (ইস্পাহানি মোড়) বাসের ভাড়া ৭ টাকা। কিন্তু আজ রবিবার তার কাছ থেকে নেয়া হয় ২০ টাকা।  শুধু তিনি নন, এ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন আরো অনেক যাত্রী।  তিনি বলেন, সরকার নির্দেশ দিয়েছে পাশাপাশি একসিটে যাত্রী নিলে, অন্যসিটটি খালি রাখতে। আমি ওঠার পর দেখলাম তারা নির্ধারিত যাত্রী ওঠার পরও যাত্রী ডাকাডাকি করছে।  আমিতো সিটে বসেছি।  অনেকে সিট পাননি।  কিন্তু অফিসেতো যেতে হবে।  রাস্তায় কি মারামারি করবো? বাসগুলোর কন্ট্রাক্টর ও চালকের খুব বেয়াদব।  তারা কারো কথাই শুনছিলেন না।
সরেজমিনে অলংকার থেকে সীতাকুণ্ড/মিরসরাইগামী, কর্ণেলহাট-একেখান-খুলশী-জিইসি, সীতাকুণ্ড-কর্ণেলহাট-অলংকার, অলংকার-ইপিজেড, অলংকার দেওয়ানহাট/নিউ মার্কেটমুখী বাস, টেম্পু, লেগুনাসহ অন্যান্য গণপরিবহনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সবগুলো সড়কের গণপরিবহনই যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ১২০ শতাংশ হারে বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে।  মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নেয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রীদের নিতেও তারা দীর্ঘক্ষণ গাড়ি থামিয়ে রেখেছে।  প্রায় গাড়িতেই যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলেও সিন্ডিকেট কৌশলে যাত্রীদের প্রতিবাদের তোয়াক্কাই করেনি পরিবহন শ্রমিক-চালকেরা।  পরিস্থিতি এমন যে, মারামারি করলেও তারা সরকারি নির্দেশ মানবে না।  পরিস্থিতি এরকম হওয়ায় প্রতিবাদ করেও যাত্রীরা কোনো সুফল পাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লুসাই পরিবহন মালিক গ্রুপের (৪ নম্বর বাস) সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম শমু দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের পরিবহন মালিক-শ্রমিকগ্রুপের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমরা আগামিকাল ১ ‍জুন থেকে পরিবহন চালাবো।  কিন্তু কিছু কিছু বাসের মালিক আজকেই গাড়ি বের করেছে বলে শুনেছি।  আমি আপনার বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।  তিনি বলেন, আমরা মালিকগ্রুপ ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বৈঠক করেছি।  ১ জুন থেকে সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোনো বিষয় পরিলক্ষিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আমরা অভিযুক্ত গাড়ি জব্দ করবো এবং আইনী পদক্ষেপ নেবো।  সুতরাং আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, উঠা-নামা বা কোনো অজুহাতেই অতিরিক্ত যাত্রী যেমন পরিবহন করা যাবে না, ঠিক তেমনি সরকার নির্দেশিত শুধুমাত্র করোনাকালে ৬০ শতাংশ যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তাই-ই নিতে হবে।  প্রতিটি গাড়িতে যে পরিমাণ সিট থাকবে তার অর্ধেক নিতে হবে।  তবে, পিক টাইমগুলোতে (সকাল ও বিকালে অফিসে যাওয়া ও আসার সময়) সিট ক্যাপাসিটি (যতগুলো সিট আছে ততগুলোই) যাত্রীর বাইরে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত কোনো যাত্রী নেয়া যাবে না।  আমরা এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি, যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে গাড়ি জব্দসহ আইনী পদক্ষেপ নিতে।

ডিসি/এসআইকে/আইএস