অবৈধ দখলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বাঁশখালীর জলকদর খাল, দ্রুত খননের দাবি

ছবি- প্রতিবেদক।

মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী প্রতিনিধি >>>
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বুক ছিড়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী জলকদর খাল।  একসময় ব্যবসায়ীদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এ খালটি খনন না করার ফলে দিন দিন নাব্যতা হারাচ্ছে।  ফলে বর্তমানে মালামাল পরিবহন ও নৌ-চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।  বিশেষ করে দখলে নিয়ে ভরাট ও নাব্যতা হারানোর ফলে জোয়ারের সময় ফিশিং, মালবাহী ও লবণবাহী বোটগুলো জোয়ারের সময় চলাচল করতে পারলেও ভাটার সময় দীর্ঘ সময় ধরে অলস বসে থাকতে হয়।  ফলে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তর থেকে দাবি উঠেছে বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী এ জলকদর খালটি খনন করার জন্য।
বর্তমানে সরকার সারাদেশে যে খাল খনন কার্যক্রম শুরু করেছে তার মধ্যে বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী এ জলকদর খালটিও রয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।  এদিকে খালটি প্রতিনিয়ত ভরাট ও অবৈধ দখলের কবলে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে।  অথচ এ খাল দিয়ে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হতে না পারলে বন্যার পানিতে ডুবতে হয় বাঁশখালীর ৮-১০টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।  এ খাল সংস্কার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায় আলোচনা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।  ফলে দুই পাশের অবৈধ দখলদারদের দখলে এবং সংস্কার না করায় দিন দিন সরু হয়ে পড়েছে।  এই জলকদর খালটি সুদূরকাল থেকে বাঁশখালীর যাতায়াত ও ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়ার অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূমিকা রেখে আসছিল।  কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই জলকদর খালটি খনন না করার ফলে দুই পাশের অবৈধ দখলদারদের দখলে সরু হয়ে পড়েছে।  ফলে বর্ষা মৌসুমে পূর্বাঞ্চলের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার ঢল এবং বন্যার পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় সর্বত্র বন্যার সৃষ্টি হয়।

ছবি- প্রতিবেদক।

স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে জানা গেছে, এক সময় বাঁশখালীর সকল ব্যবসায়ী নৌকা এবং সাম্পানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে এই জলকদর খাল হয়ে সকল ধরনের মালামাল নিয়ে আসতেন শঙ্খ নদী হয়ে।  জলকদর খালের সাথে বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার প্রবাহিত পানি খালে নামার জন্য অবস্থিত অধিকাংশ সুইচ গেটগুলো নানাভাবে দখল এবং বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে বন্যার সৃষ্টি হয় খালের পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলোতে।  জলকদর খালটি শঙ্খ নদী হয়ে খানখানাবাদের অভ্যন্তরে বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপ, ছনুয়া, শেখেরখীল মধ্যবর্তী হয়ে বাঁশখালীর সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলেছে।  এই জলকদর খালটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও নানাভাবে দখলে থাকায় বর্তমানে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বাঁশখালীর ৮টি পাহাড়ি ছড়া তথা পুঁইছড়ির ছড়া, নাপোড়া ছড়া, চাম্বলের ছড়া, শীলকূপের ছড়া, জলদী ছড়া, পাইরাংয়ের ছড়া, কালীপুরের ছড়া ও সাধনপুরের ছড়া হয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিগুলো পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়।  সেই পানিগুলো নানাভাবে জলকদর খালে গিয়ে পৌঁছতে না পারলে সর্বত্র বন্যার সৃষ্টি হয়।  বিগত দিনে এই জলকদর খালে পানি নিষ্কাশন সহজ হলেও সম্প্রতি সময়ে দুই পাশে অসংখ্য অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়াতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূরূহ হয়ে পড়ে।
অপরদিকে খালটি সরু হয়ে যাওয়াতে পূর্বের মত ব্যবসায়ীরা নানাভাবে বোট অথবা সাম্পানের মাধ্যমে আগের মতই মালামাল পরিবহন করতে পারে না।  গতকাল শুক্রবার (১৯ জুন) বিকেলে ছনুয়া সরলিয়া বাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা পরির্দশনকালে দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করায় ঘরে বসে থাকার পাশাপাশি দিনব্যাপি নানা রকম কাজকর্ম করার ফাঁকে ফাঁকে জলকদর খালের দুই পাশে অবৈধভাবে ভরাট করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করছেন।  করোনার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভরাট করা হচ্ছে চলছে খালটি।
এ ব্যাপারে বাহারছড়ার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, সারাদেশে একটি করে খালকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খনন করা হচ্ছে।  বাঁশখালীর এ জলকদর খালটি খনন করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।  আশা রাখি অচিরেই বাঁশখালীবাসী সুফল পাবে খালটি খননের মাধ্যমে।
শেখেরখীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, জলকদরখালটি সংস্কার হলে বহুমুখি লাভবান হবে আমার এলাকার জনগণসহ বাঁশখালীবাসী।  তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত এ খালটি একসময় ব্যবসার ও নৌচলাচলের প্রাণকেন্দ্র থাকলেও বর্তমানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা নৌ-যোগে পণ্য পরিবহনে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাচ্ছে।  এ খালটির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে পুন:সংস্কার করা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, জলকদরখালটি খুবই গুরুত্বর্পূণ খাল।  এই খাল দিয়ে মানুষের প্রায় অর্থনৈতিক কাজকর্ম চলে।  এই খালটি সংস্কার করা হলে লাভবান হবে বাঁশখালীর সাধারণ জনগণ। খালটির দুইপাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সংস্কার করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, সারাদেশে একটি করে খাল খননের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।  তার মধ্যে বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী এ জলকদর খালটিও রয়েছে।  এ খালটি খনন করার জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।  আগামি অর্থ বছরে কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, বাঁশখালীর বুক চিড়ে প্রবাহিত জলকদর খালটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  এ খাল সংস্কারে উপজেলা উন্নয়ন সমম্বয় সভায় আলোচনার প্রেক্ষিতে সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, তারই প্রেক্ষিতে এ খালটি খনন কার্যক্রম আগামি অর্থ বছরে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএমবিটি