উত্যপ্ত হচ্ছে চসিক নির্বাচন, নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহত ২

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত ও একই দলের বিদ্রোহ করে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মধ্যে সহিংস রূপ ধারণ করছে।  গত মার্চ মাসে শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও একাধিক সংঘর্ষ এমনকি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটেছে।  করোনা মহামারির কিছুটা আগ্রাসী রূপ কমে আসায় আবারো শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা।  গত ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রচারণা দিনে দিনে উত্যপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।  নিজ দলের নেতা-কর্মীরাই ভাইয়ের গ্রুপের কারণে দুই-তিন ধারায় বিভক্ত হয়েছে।  ফলে নিজ নিজ শক্তি-সামর্থ্য দেখাতে মরিয়া তারা।
সেই মরিয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে।  মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম নগরের ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং দলটির প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।  গুরুতর আহত হয়েছেন আরো একজন।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, নিহতের নাম আজগর আলী বাবুল (৫৫)।  এছাড়া মাহবুব নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উপপুলিশ কমিশনার ফারুক জানান, পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে রাত ৮ টার দিকে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়।  একপর্যায়ে দু’জন গুলিবিদ্ধ হলে একজন মারা যান।  ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘একজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।  তিনি গুলিবিদ্ধ ছিলেন। পরে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়’।
নজরুল ইসলাম বাহাদুর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং পাঠানটুলি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।  তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী।  ২০১০ সালে তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।  ২০১৫ সালে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী আবদুল কাদেরের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
গঠনার সূত্রপাতের বর্ণনা দিয়ে নজরুল ইসলাম বাহাদুর জানান, ‘আমি মোগলটুলি এলাকায় গণসংযোগ করছিলাম।  সেখানে আমি মেয়র প্রার্থী রেজাউল ভাইয়ের নির্বাচনি কার্যালয়ে কিছুক্ষণ বসি।  পরে আমি নজির ভাণ্ডার লেইনে গণসংযোগ করতে যাই।  হঠাৎ করে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু করে সন্ত্রাসীরা।  আবদুল কাদেররের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলার পাশাপাশি গুলিবর্ষণ করে।  আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বাবুল নামে আমার একজন কর্মী নিহত হয়েছেন।  মাহবুব নামে আমার আরেকজন কর্মী আহত হয়েছেন’।
আজগর আলী বাবুলের ছেলে সিজান মোহাম্মদ সেতু বলেন, ‘আমার বাবা যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।  তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের পক্ষে গণসংযোগ করছিলেন।  আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম।  হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে সবাই দৌড়াতে থাকে।  আমি আমার বাবার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবার সময় উনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন।  পরে আমরা তাকে মেহেদিবাগে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাই’।
জানতে চাইলে একই দলের বিদ্রোহ করা কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারি আবদুল কাদের বলেন, ‘বাহাদুর সাহেবের লোকজন গতকালও কদমতলীতে আমার পোস্টার ছিঁড়েছে।  আজ (মঙ্গলবার) আমি পুলিশকে অবহিত করেই মগপুকুর পাড়ে গণসংযোগে যাই।  আমি একটি ভবনের দোতলায় ছিলাম।  হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুনি।  তখন আমার লোকজন সবাই দৌড়ে চলে যায়।  আমি প্রাণরক্ষায় একটি বাসায় আশ্রয় নিই।  সেখান থেকে দেখি বাহাদুর সাহেবের লোকজন যাদের মধ্যে কিশোল গ্যাংয়ের সদস্য অনেকে আছেন, তারা গুলি ছুঁড়ছে।  যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, তিনিও তাদের সঙ্গেই ছিলেন।  পরিকল্পিতভাবে তারা একটা ঘটনা ঘটিয়েছে।  এরপর আমার বাসা ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে’।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।  সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি সদীপ কুমার দাশ।
এদিকে, নগরের দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার আরেক বিদ্রোহী কাউন্সিলরপ্রার্থী যিনি একই ওয়ার্ডে সদ্য সাবেক কাউন্সিলর- মোরশেদ আকতার চৌধুরী তার ফেসবুক আইডিতে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে উদ্দেশ্য করে।  সেখানে তিনি তিনটি নামফলকের ছবিও দেন যেখানে তার নামটি কালো রং দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মানসিক রোগী আখ্যায়িত করে তার নাম মুছে ফেলার প্রতিকার চেয়েছেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএস