রাতের পার্টিতে নেহা ও তার বান্ধবীরা একান্তে সময় দিতেন চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘রাতভর মাস্তি হবে আনলিমিটেড।  আনন্দ দিতে পুরো টিম নিয়ে প্রস্তুত আমরা।  এই আয়োজন আপনার জন্যই।  আমাদের টিমে রয়েছে বেশ কিছু অসাধারণ সুন্দরী, স্মার্ট, ভদ্র, শিক্ষিত মেয়ে ও ভাবি বয়সের নারী।  বিটের তালে তালে নাচে-গানে মুগ্ধ হতে, অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে অংশ নিন আমাদের আয়োজনে’।  এভাবেই বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  এসব পার্টিতে অংশ নেন ব্যবসায়ী, মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরিজীবী ও বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা।  গুলশানের নিকেতন, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন করা হয় এসব পার্টির।  কখনও কখনও নৌবিহারের আয়োজন করা হয়।
 বিলাসবহুল লঞ্চে নাচ, গান থেকে শুরু করে থাকে চিত্ত বিনোদনের যাবতীয় আয়োজন।
লঞ্চের ভেতরে কেবিনের পরিবেশন ভিন্ন।  মদে বুঁদ হয়ে সঙ্গীকে নিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটান পার্টিতে অংশগ্রহণকারীরা।  লঞ্চ ছুটে যায় সদরঘাট থেকে চাঁদপুর, কখনও বরিশাল অভিমুখে..।  এসব পার্টিতে অংশ নেন পরিচিত ডিজেরা।  তবে ডিজেদের বাইরে আয়োজন থাকতো।  আর এসব আয়োজনের হোতাদের একজন নেহা।  এসব পার্টিতে নেহা ছিলেন নিয়মিত।  দামি দামি পোশাক পরে এসব পার্টিতে যেতেন নেহা।  ব্যবহার করতেন দামি ব্রান্ডের মেকআপ।  পার্টিতে নিজের রূপ সৌন্দর্য দেখিয়েই আকৃষ্ট করতেন বিত্তশালী ও বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের।  তার আয়ের উৎস ছিলো অনৈতিক এসব কার্যকলাপ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার ফারজানা জামান নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।  পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নেহা জানিয়েছেন- মূলত বিলাসী জীবন-যাপনের জন্যই এই পথ বেছে নেন তিনি।
নেহার দামি পোশাক থেকে শুরু করে হাতের মোবাইলফোনটি উপহার পাওয়া।  নেহা ব্যবহার করেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের আইফোন টুয়েলভ প্রো ম্যাক্স।  এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রথমবার মেশার পরই এই ফোনটি গিফট পান তিনি।  এজন্য নিজ থেকেই একটা দামি ফোন প্রয়োজন বলে জানিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ীকে।  চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো আরও কয়েক ডিজে ও মডেলদের।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রিমান্ডের চতুর্থ দিনে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন নেহা।  গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পর শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নেহা।  কখনও কখনও রেগে যান।  তিনি জানান, সমাজে ভালো মানুষের মুখোশপড়া যারা তাদের অনেকের আসল চরিত্র তার জানা।  এখন তাকে সবাই খারাপভাবে দেখছে।  কিন্তু যারা তাকে ডাকেন, যারা এসব পার্টিতে অংশ নেন, রাতভর নারী ও মদে বুঁদ হয়ে থাকেন তাদেরকে কেউ খারাপ বলার সাহস পাবে না।  তবে এ বিষয়ে তিনি কারও নাম বলতে চান না।
তার ফোনের কললিস্ট যাছাই করে পাওয়া গেছে সেইসব ব্যবসায়ীদের পরিচয়।  যাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো তার।  তার মোবাইলফোনে হোয়াটসঅ্যাপে রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদেবার্তা।  বিভিন্ন ধরণের ছবি, ভিডিও, টিকটক।  এসব ছবিতে স্বল্প পোশাকপড়া নেহা।  পাশে বসা, দাঁড়ানো যুবক ও মধ্য বয়সী পুরুষ।  ছবি রয়েছে অনেক তরুণীদের সঙ্গেও।
এরমধ্যে এক মধ্য বয়সী ব্যক্তি সম্পর্কে নেহার তথ্য হচ্ছে, প্রবাসী ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বনানীর একটি তারকা হোটেলে পরিচয় হয়েছিলো তার।  ওই ব্যবসায়ী যখনই দেশে আসেন ডাক পড়ে নেহার।  কখনও কখনও ওই প্রবাসীর অন্য বন্ধুদের জন্য নিজের বান্ধবীদেরও নিয়ে যান নেহা।  রাতভর মাস্তি হয়ে হোটেলে।  কখনও কখনও উত্তরার একটি বাসাতেও যান তিনি।
গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার।  শুরু থেকেই ওই ব্যবসায়ী বেশ আকৃষ্ট ছিলেন তার প্রতি।  ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনের গল্প শুনিয়ে কয়েক মাসে তিন-চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রামের মাহতাব নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় ছিলো নেহার।  নেহার মাধ্যমে অনেক তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় হয় মাহতাবের।  তারপর তাদেরও ডাকতেন।  নিজের কাছে ছাড়াও পাঠাতেন বিভিন্ন জনের কাছে।  চট্টগ্রামের ওই বব্যসায়ীরা প্রায়ই তরুণীদের দেশের বাইরে নিয়ে যেতেন।  নেহাসহ আরেক তরুণীর বাইরে যাওয়ার কথা ছিলো।  কিন্তু করোনার কারণে যাওয়া হয়নি।  নেহাকে বন্ধুর মতো পাশে থেকে সকল অপকর্মে সহযোগিতা করতেন শাফায়াত জামিল বিশাল।  নেহা পুলিশকে জানান, বিশার তার চাচাতো ভাই।
জিজ্ঞাসাবাদে পার্টির আয়োজকদের সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন নেহা।  নেহা জানিয়েছেন, এটা গোপন কিছু না।  সবাই জানে।  এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও পার্টির আয়োজন করা হয়।  একান্তে সময় কাটানোর জন্য ডজন খানেক বিভিন্ন বয়সের নারী থাকে এসব পার্টিতে।  কর্মাশিয়াল পার্টিতে নতুন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে পরিচয় হয়।  পরিচয়ের পর ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে ওঠে বলে জানান তিনি।
গত ২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে পার্টিতে মদ সরবরাহ করেছিলো বিশাল।  বিশাল বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।  এছাড়াও এই ঘটনায় মারা যাওয়া ওই ছাত্রীর ছেলে বন্ধু আরিফ ও তাদের বন্ধু তাফসিরকেও আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।  ওই দিনের পার্টিতে মদপানের পর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তাদের বন্ধু আরাফাতও।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ জানান, নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য জানা গেছে।  এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।  অপরাধে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ