জঙ্গিরা করছে মগজ ধোলাই

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
জঙ্গিরা যেভাবে ভুলিয়ে-ভালিয়ে দল ভারী করে, ঠিক একইভাবে সমাজের নানা স্তরের মানুষকে সহনশীলতা ও মননশীলতার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না।  উগ্রবাদের বিরুদ্ধে দেশে ‘কাউন্টার মোটিভেশন’ পর্যাপ্ত নয়। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  তাই উগ্রবাদে জড়িতরা মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফৌজদারি অপরাধে জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি উগ্রবাদ দমনেও চাই ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ।  জঙ্গিরা যেভাবে মগজ ধোলাই করছে, বিপরীতে তরুণ মস্তিষ্কে মননশীলতার বীজ বপণও জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ‘গত এক দশকে যেসব লেখক, ব্লগার ও প্রকাশক জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন, তাদের বিচার হচ্ছে।  এটা ভালো দিক। কিন্তু বিচারিক ব্যবস্থার পাশাপাশি এই নিষ্ঠুর আদর্শকে প্রতিরোধও করতে হবে।  এজন্য কাউন্টার মোটিভেশন প্রয়োজন।  কিন্তু তা দেখছি না।  এ জন্য শিক্ষা কারিকুলাম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিবর্তন আনতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘উগ্রবাদী সংগঠনগুলো কিন্তু বসে নেই।  তারা মোটিভেশন দিয়ে দল ভারী করছে ঠিকই।  কিন্তু তাদের প্রতিরোধে পাল্টা কোনও আদর্শ শক্তিশালীভাবে গড়ে উঠছে না’।
প্রসঙ্গত,মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় হয়েছে। পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন আদালত।
অধ্যাপক জিয়া বলেন, ‘বিশ্বরাজনীতির ভেতর উগ্রবাদ ঢুকে গেছে।  এ থেকে সহসা মুক্তি মিলবে না।  গ্লোবাল টার্মসে যতদিন উগ্রবাদ থাকবে, ততদিন আমাদের দেশেও থাকবে।  দেশকে নিরাপদ রাখতে হলে দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।  একটি সফট অ্যাপ্রোচ, অপরটি হার্ড অ্যাপ্রোচ।  সফট অ্যাপ্রোচ মানে সামাজিক সচেতনতা ও সঠিক আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া এবং হার্ড অ্যাপ্রোচ হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও বিচারিক কার্যক্রম’।
উগ্রবাদকে রোগ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. তাজুল ইসলাম।  তার মতে, এই রোগের ওষুধ হলো ‘কাউন্টার মোটিভেশন’। বলেন, ‘দেশে কাউন্টার মোটিভেশন পর্যাপ্ত হচ্ছে না।  দ্রুত রেডিক্যালাইজড হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।  সরকারকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে’।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে রাজধানীতে সাতটি জঙ্গি হামলায় আটজন খুন হন।  এসব হত্যাকাণ্ডের কয়েকটির বিচারিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।  বাকিদের বিচার চলছে।  ‘কারগারে থাকা জঙ্গিদের আদালতে আনা নেওয়ার সময় ওরা বেশ ঔদ্ধত্য দেখায়।  কারাগারেও মোটিভেশন হচ্ছে না’।  যোগ করেন ডা. তাজুল ইসলাম।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যারা উগ্রবাদে জড়িয়েছে তারা একটি শক্ত বিশ্বাসের জায়গায় রয়েছে।  তাদের সেই বিশ্বাস ভাঙ্গতে হলে শক্তিশালী আরেকটি বিশ্বাস বা যৌক্তিকতা লাগবে।  যাতে তাদের আগের বিশ্বাসটা ভেঙে যায়।  কিন্তু সেই পর্যায়ের প্রেষণা আমরা দিতে পারছি না।  এ কারণে কারাগারে থেকেও তারা সংশোধন হচ্ছে না’।
পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়ে কাউন্টার মোটিভেশনের কাজ করছি।  এ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করছি।  ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়ানো হচ্ছে।  ফলও পাচ্ছি।  আগে যে রকম হামলার ঘটনা ঘটতো, এখন তেমনটা নেই’।

ডিসি/এসআইকে/এমএস