মামলার এজাহারে যা বললেন পরীমণি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও বন্ধু অমিসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়িকা পরীমণি।  সোমবার (১৪ জুন) সাভার থানায় পরীমণি বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।  তবে মামলাটি দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত নথিভুক্ত হয়নি।  মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে।  দুই নম্বর আসামি পরীমণির বন্ধু অমি।  এছাড়া চার জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল কাফি জানান, মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।  মামলা নথিভুক্ত হলে আমরা বিষয়টি আইনগতভাবে খতিয়ে দেখবো।
মামলার এজাহারে পরীমণি বলেন, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িযোগে তারা উত্তরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।  পথে অমি বলে বেড়িবাঁধস্থ ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে।  অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করান।  কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে।  তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়।  অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর তোমরা নামলে নামতে পারো।
এজাহারে পরীমণি আরও বলেন, তখন আমার ছোটবোন বনি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি।  টয়লেট হতে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন।  আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদ্যপানের জন্য জোর করেন।  আমি মদ্যপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে।  এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।
এজাহারে বলা হয়েছে, এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে।  সে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারেন।  তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে নীলাফোলা জখম করে।
পরীমণি বলেন, আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়।  এসময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চার জন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করে।  আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো।
এজাহারে তিনি আরও বলেন, দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায়।  সে অজ্ঞাতনামা চার জন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।  আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই।  রাত আনুমানিক তিনটার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।
পরীমণি অভিযোগ করেন, আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিভিন্নপ্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে।  পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে, রবিবার (১৩ জুন) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার বিচারের দাবি জানান পরীমণি।  অভিযোগ করেন, ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছিল।  এমন বিস্ফোরক অভিযোগের ঠিক দুই ঘণ্টার মাথায় নিজ বাসায় বসে সাংবাদিকদের কাছে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেন পরী।
তিনি অভিযোগ করেন, তার ওপর নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছেন নাসির ইউ মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি।  ঘটনাটি ঢাকার বোট ক্লাবে ঘটে।  অভিযুক্ত নাসির উত্তরা ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি পদে আছেন।  পরে সোমবার (১৪ জুন) তিনি সাভার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ