দুই হাজার তরুণীর জীবন নিয়ে খেলছিল ওরা তিনজন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
প্রাথমিকের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। তৃতীয় শ্রেণিতেই ইতি টেনেছেন পড়াশোনার। তবে পড়াশোনায় বেশিদূর এগোতে না পারলেও ফেসবুক ব্যবহারে বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন। আর এ দক্ষতা ভালো কোনো কাজে লাগাননি। লাগিয়েছেন অন্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার কাজে। হ্যাক করেছেন দুই হাজার তরুণীর আইডি। নিয়েছেন নগ্ন ছবি-ভিডিও। নগ্ন ছবি-ভিডিও নিয়েই ক্ষান্ত হননি, ছিনিমিনি খেলেছিলেন তাদের জীবন নিয়েও।
এমনই এক সাইবার অপরাধ চক্রের তিন তরুণকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। গ্রেফতার তিনজনের বাড়িই মাদারীপুরের শিবচরে। তারা হলেন- শামীম সরদার, সজিব খলিফা ও ওবায়দুর রহমান নোবেল। এর মধ্যে শামীম ও সজিব তৃতীয় শ্রেণিতেই শিক্ষাজীবনের ইতি টানেন। আর মুদি দোকান ছেড়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন নোবেল। তবে তারা সবাই ইউটিউব থেকে এ দীক্ষা নেন।
জানা গেছে, ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার নামে দুই হাজার তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন শামীম, সজিব ও নোবেল। ভুক্তভোগী তরুণীদের ভয় দেখিয়ে তারা আদায় করতেন টাকা। আর টাকা না পেলে তাদের বিভিন্নভাবে হেয় করতেন।
গ্রেফতারদের প্রথম টার্গেট তরুণী। এরপর একের পর এক চলে তাদের আইডি হ্যাক করে গোপনীয় ছবি ও ভিডিও নেয়া। পরে টাকা না দিলে দেওয়া হতো হুমকি। তবে বারবার একই অঞ্চলের তরুণদের এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে এক নববধূ জানান, একদিন দুপুরে এক বন্ধুর আইডি থেকে তার আইডিতে একটি লিঙ্ক যায়। লিঙ্কে ঢুকতেই লগইন করতে বলা হয়। লগইন করার পরই তার আইডি হ্যাক হয়ে যায়। এরপর নানাভাবে চেষ্টা করেও আইডিতে আর ঢুকতে পারেননি তিনি। ওইদিন সন্ধ্যার পর একটি মেসেজ যায় তার মুঠোফোনে। মেসেজে বলা হয়- তার স্বামীর কাছ থেকে কিছু অন্তরঙ্গ ছবি সংগ্রহ করেন তারা। এরপর আরেকটি আইডি দিয়ে সেসব ছবি তার কাছেও পাঠানো হয়। একই সঙ্গে শর্ত না মানলে এসব ছবি ভাইরাল করারও হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগী নববধূ।
তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে তারা টাকা দাবি করেন। ছবি যেন না ছাড়ে সেজন্য তাদের টাকা দেওয়া হয়। আমার এক বন্ধুর কাছ থেকেও পাঁচ হাজার টাকা নেন তারা। আমার আইডি থেকেই ওই বন্ধুর কাছে লিঙ্ক পাঠানো হয়।
ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের সাইবার স্পেশাল ও সিরিয়াস ক্রাইমের উপ-পুলিশ কমিশনার শরিফুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার তিনজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা ডিভাইসে প্রায় দুই হাজার আইডি হ্যাক করার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব আইডি ব্যবহারকারীরা পরস্পর বন্ধু বা আত্মীয়। এ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি- মাদারীপুরের রাজৈর, শিবচর ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা এবং রাজবাড়ী সদরে অসংখ্য হ্যাকার রয়েছে। যাদের হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী। এ পর্যন্ত আমরা দুইশ হ্যাকারকে গ্রেফতার করেছি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, তাদের আশপাশে আরো অনেক হ্যাকার রয়েছেন। যারা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই নিজেদের শিকার খোঁজার জন্য ডিভাইস নিয়ে বসেন।
ফেসবুক ব্যবহারে আরো বেশি সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ডিবি পুলিশের এ কর্মকর্তা। যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো ইউআর লিঙ্কে না ঢোকার জন্যও পরামর্শ দেন তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এমএকে