উত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
হাতুড়ি ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে খুন করা হয় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুরের কবির আহম্মদ পাড়ার বাসিন্দা মাহবুব আলমকে। সে ঘটনার বিচার পেতে সাত বছর ধরে মরিয়া ছিলেন স্ত্রী মোরশেদা বেগম। থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করতে গড়িমসি করায় বহু দেনদরবার করে করেছিলেন খুনের মামলা। কিন্তু এখন আর তিনি বিচার চান না। মামলাও চালাতে চান না। উল্টো তিনি আদালতে হাজির হয়ে মাহবুব খুনের মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত চার আসামিকে জামিন পাইয়ে দিয়েছেন। তারা কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ফুল দিয়ে আসামিদের বরণও করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামপুরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আসামিরা প্রভাবশালী। ভয় দেখিয়ে এবং টাকার বিনিময়ে মাহবুবের স্ত্রীকে তারা বাগে এনেছেন।
২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর দুপুরে বাড়ির পাশের একটি চায়ের দোকান থেকে যুবলীগ কর্মী ও লাকড়ি ব্যবসায়ী মাহবুব আলম ও তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আমিনকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে রাজানগর ইউনিয়নের ঠাণ্ডাছড়ি চা বাগানের পাহাড়ে নিয়ে ছুরি, হাতুড়ি, হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে এবং পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়ে তাদের ক্ষতবিক্ষত করে। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় মাহবুব ও আমিনকে ফেলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে মাহবুবকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আর আমিন এখন পঙ্গু জীবনযাপন করছেন।
আমিন বলেন, চার্জশিটভুক্ত ১৬ সন্ত্রাসী মাহবুব ও আমাকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। মাহবুব মারা যায়। আমি পঙ্গু হয়ে এখনও বেঁচে রয়েছি। আমি এ খুনের মামলার রাজসাক্ষী। আজিজ, পেন্ট কামাল, জাসেদ, রঞ্জুসহ আসামিরা সরাসরি খুন করেছে। তিনি বলেন, মাহবুবের স্ত্রী মামলার বাদী হলেও তিনি ঘটনার কিছুই দেখেননি। এখন আসামিদের থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আসামিরা আমাকেও পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সমঝোতা করতে চেয়েছিল, রাজি হইনি।
কবির আহম্মদ পাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, র্যাব আসামিদের গ্রেফতার করার পর প্রতিদিন মোরশেদার বাড়িতে কেউ না কেউ গিয়ে তাকে বাগে আনার চেষ্টা করে গেছেন। দুই লাখ টাকা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনে দেওয়ার আশ্বাস পেয়ে আসামিদের পক্ষে জবানবন্দি দিয়ে তাদের জামিন পাইয়ে দিয়েছেন মোরশেদা। তা ছাড়া আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় টাকার সঙ্গে তারা হুমকি-ধমকি দিয়েও সমঝোতায় আসতে বাধ্য করেছে।
মাহবুব হত্যা মামলাটি এখন চট্টগ্রাম সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আ স ম শহীদুল্লাহর আদালতে বিচারাধীন। ২০২১ সালের ১৫ মার্চ চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান থাকা অবস্থায় বাদী পুরো মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেন।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) রুবেল পাল বলেন, বাদিনী মোরশেদা বেগম গত ৩০ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে চার আসামিকে জামিন দেওয়ার আর্জি জানান। বাদিনী আদালতকে বলেন, তার স্বামীকে চার্জশিটভুক্ত আসামিরা খুন করেননি। তারা এ মামলায় জড়িত নয়। বাদিনীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত চার আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।
এপিপি বলেন, বাদিনীর আচরণ আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। বরং পুরোপুরি অস্বাভাবিক। তাই তাকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বৈরী ঘোষণা করে জেরা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোরশেদা বেগম বলেন, আমার স্বামী হত্যার মামলায় যাদের চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়েছে, তারা এ ঘটনা ঘটায়নি। আদালতে এ কথা বলেছি। কারা ঘটিয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সেটা আমি জানি না। আসামিদের সঙ্গে আপনার সমঝোতা হয়েছে- অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আসামিরা আমাদের একই এলাকার লোক। তারা সবাই নামিদামি ব্যক্তি। আমি গরিব। তারা আমাকে বুঝিয়েছেন, জানিয়েছেন এ ঘটনা তারা ঘটাননি। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করেছি। আর্থিক কোনো সমঝোতা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন মোরশেদা।
ডিসি/এসআইকে/এসইউ