বাবর-নোবেল-শিবু-টিপুসহ ১৬ জনের সম্পৃক্ততা নেই সিআরবির জোড়া খুনে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দীর্ঘ সাড়ে আট বছর পর চট্টগ্রাম নগরীর সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকার বহুল আলোচিত জোড়া খুনের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।  এ মামলায় ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।  মামলার ৬৪ জন আসামির মধ্যে অমিত মুহুরী কারাগারে মারা যাওয়ায় ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।  দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের মধ্যে ১৬ জনের কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  সম্পূরক অভিযোগপত্রের তিন নম্বর কলামে অভিযুক্তদের তালিকার শেষ দিকে ৪১ থেকে ৬৪ ক্রমিক নম্বরে তাদের নাম রয়েছে।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, যুবলীগ নেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু, মো. আব্দুল্লাহ আল রায়হান, রায়হান মাহমুদ ওরফে শুভ, কামরুল হাসান ওরফে রায়হান, মো. জমির উদ্দিন, মো. রাজু মুন্সী, লাবলু ঘোষ, রাজেশ বিশ্বাস, কুর্ম, মহন চন্দ্র তাঁতী, মো. নুরুচ্ছফা ওরফে টিপু, মো. মনোয়ার উল আলম চৌধুরী নোবেল, আব্দুল কাদের ওরফে সুমন ওরফে কালু, বাকেশ ঘোষের কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।  তাদের বিরুদ্ধে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এবং হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কোনো ধরনের বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য-প্রমাণ পায়নি তদন্তকারী সংস্থাটি।
তবে সাক্ষ্য-প্রমাণ না পেলেও মামলার পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তার জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে তাদের অভিযুক্ত করায় আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এর সঙ্গে মিল রেখেই সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামির কলামে ওই ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।  মামলার কার্যক্রম শুরু হলে উল্লেখিত ১৬ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ারও সুপারিশ করা হয় পিবিআই প্রতিবেদনে।
গতকাল সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে এ অভিযোগ গঠন করা হয়।  মামলার চার্জ গঠন বা আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরুর সময় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য আদালতের কাছে সুপারিশও করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৪ জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি এলাকায় রেলের ৪৮ লাখ টাকার দরপত্র নিয়ে দুই গ্রুপের বিরোধের জেরে গোলাগুলি হয়।  সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাজু পালিত (২৪) ও স্থানীয় সিআরবি বস্তির শিশু আরমান (৮)।  এদের মধ্যে সাজু পালিত ছিলেন বাবরের অনুসারী।  ঘটনার পর কোতোয়ালী থানার এসআই মহিবুর রহমান বাদি হয়ে ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।  আর ঘটনার এক মাস পরে যুবলীগকর্মী সাজু পালিতের মা মিনতি পালিত বাদি হয়ে অজিতকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন আদালতে।  একসঙ্গে দুই মামলার তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
দুই দফা তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথম অভিযোগপত্র জমা পড়েছিল।  তাতে ৬২ জনকে আসামি এবং ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল।  এর দুদিন পর তৎকালীন মহানগর হাকিম নওরিন আক্তার কাঁকন অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে ‘অধিক গুরুত্বের সঙ্গে’ তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।  পরে পিবিআইয়ের অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে।  সেখানে ৬৪ জনকে আসামি করা হয়, সাক্ষী করা হয় ৭ জনকে।
চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পিবিআইয়ের প্রতিবেদন, সরকারি কৌঁসুলি এবং আদালত- এখানে তিনটা স্তর রয়েছে।  পুলিশের প্রতিবেদনই শেষ না’।  পিপি বলেন, ‘১৬ আসামি চাইলে উচ্চ আদালতেও যেতে পারেন’।

ডিসি/এসআইকে/আরসি