রামুতে টিসিবি’র কার্ড বিতরণে ৩০০ টাকা করে নিলেন মহিলা মেম্বার

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
রামুতে টিসিবি’র পণ্য বিতরণে জনপ্রতিনিধি কর্তৃক ৩০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।  এ ঘটনায় পুরো রামুতে তোলপাড় চলছে।  ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তসলিমা আক্তার লিপি নিজ এলাকায় টিসিবি’র কার্ড বিতরণকালে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করেছেন।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকাল থেকে রামুর বাইপাস এলাকায় টিসিবির পণ্য বিতরণকালে ভুক্তভোগী অসংখ্য নারী-পুরুষ টাকা নেয়ার বিষয়টি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমাকে অবহিত করেন।
এসময় সাংবাদিকদের কাছে অসংখ্য ভুক্তভোগী জানান, কয়েকদিন ধরে মহিলা মেম্বার তসলিমা আক্তার লিপি টিসিবির কার্ড দেয়ার আশ্বাসে তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ৩০০ টাকা করে নেয়।  ওই সময় তসলিমা আকতার লিপি তাদের টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে পণ্য দেয়ার লোভ দেখান।
অভিযোগকারী ভুক্তভোগীরা হলেন ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বশির আহমদের স্ত্রী জিয়াসমিন আকতার, মৃত শামসুল আলমের স্ত্রী খতিজা বেগম, নুরুল ইসলামের স্ত্রী আকতার বেগম, আশরাফজামানের ছেলে নুরু, মো. আলীর স্ত্রী মাবিয়া, আবুল কাশেমের স্ত্রী জোহরা, নুরুল হকের স্ত্রী নুর জাহান, ছিদ্দিক আহমদের স্ত্রী হতবানু, ওমর ফারুকের স্ত্রী শাহেনা আকতার, নুর আলমের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, মো. হোছনের স্ত্রী জয়তুন বেগম, মফিজ মিয়ার স্ত্রী শাহনুর বেগম, আবদুল হালিমের স্ত্রী হাজেরা বেগম ও মৃত আবু তাহেরের স্ত্রী সাইফুল হোছাইনসহ অনেকে।  তারা জানান, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই মহিলা মেম্বার তসলিমা আক্তার লিপি টিসিবির কার্ড দেয়ার সময় ৩০০ টাকা করে নিয়েছেন।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, ৩০০ টাকা করে নেয়ায় তারা মনে করেছিলেন এসব পণ্যসামগ্রী নিতে আর কোনো টাকা দিতে হবে না।  তাই তারা অনেকে টাকা ছাড়াই পণ্য নিতে আসছিলেন।  কিন্তু পণ্য নেয়ার সময় ৩টি পণ্যের জন্য সরকার নির্ধারিত ৪৬০ টাকা দাবি করেন ডিলার।  এসময় টাকা দিতে না পারায় তারা পণ্য কিনতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানান, ৩০০ টাকা করে নিলে তো এসব পণ্যের দাম বাজার মূল্যের চেয়ে বেশী হয়ে যাবে।  এভাবে টাকা নেয়া দুঃখজনক।  এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত মহিলা মেম্বারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।  এমনকি তিনি মেম্বারের পদও হারাতে পারেন।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো জানিয়েছেন, মহিলা মেম্বার তসলিমা আক্তার লিপির বিরুদ্ধে টিসিবি’র পণ্য বিতরণে ৩০০ টাকা করে আদায় করার বিষয়ে তাকেও একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন।  এভাবে টাকা নেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।  তিনি এ অনিয়মের নিন্দা জানিয়ে বলেন, কোনো ধরণের দুর্নীতিকে ছাড় দেয়া হবে না।  এ ব্যাপারে তিনি এবং পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা মঙ্গলবার (২২ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অফিসেরচর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ি নুরুল আলম জানান, অফিসেরচর, চরপাড়া, দক্ষিণ দ্বীপ ফতেখাঁরকুল, পূর্ব দ্বীপ ফতেখাঁরকুল গ্রামের হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছ থেকে মহিলা মেম্বার তসলিমা আক্তার লিপি টিসিবি’র কার্ড দেয়ার সময় জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে আদায় করেছেন।  যা এলাকার বিবেকবান প্রতিটি মানুষকে হতবাক করেছে।  প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা আরও বেশী হতাশ হয়ে পড়েছেন।  এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি আরো বেড়ে যাবে।  এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু উপজেলা শাখার সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি সরকারের মহতী উদ্যোগ।  কিন্তু রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার তসলিমা আক্তার লিপির মতো নির্লজ্জ দুর্নীতিবাজদের কারণে সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।  সরকারের উচিত এ ব্যাপারে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।
অভিযুক্ত ইউপি মহিলা সদস্য তসলিমা আক্তার লিপি জানান, তিনি কারো কাছ থেকে টাকা নেননি।  এলাকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্বাচনী বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ