রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তদন্ত শেষে যেসব মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মনিটরিং কমিটিকে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর জন্য সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি এবং স্থগিত মামলা সচলেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে পুলিশকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে বিশেষ কোনও মতামত ও সুপারিশ থাকলে দ্রুত সেই মতামত ও সুপারিশ দিতে দেশের সব জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ করতে ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা এবং নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। সেই নির্দেশনার আলোকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর জন্য সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনায় দায়ের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি যেসব মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে বা অন্য কোনো কারণে স্থগিত রয়েছে সেগুলো সচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা হয়েছিল তিন হাজার ৭৮৬টি। এর মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় তিন হাজার ৫৪৯টির। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় ১৮৬টি মামলার। এখনও তদন্ত শেষ হয়নি ৫১টি মামলার।
ওই সময়ে অবরোধ ও হরতাল চলাকালীন সহিংসতায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এছাড়া ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে সহিংস ঘটনায় দায়ের হয়েছিল এক হাজার ৮২৬টি মামলা। এর মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৭৮৮টি মামলার। চারটি মামলা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। এ মামলাগুলোর আসামি বা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তদারকি অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ব্যাপক সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। সেসব সহিংস কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪৩৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল সারাদেশে। এরমধ্যে ৩৮৫টি মামলায় অভিযোগপত্র ও ৩৩টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। ১৭টি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও সোনা, মাদক, অস্ত্র, শিশু ও মানব পাচার মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মামলা সক্রিয় হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক মামলা বলে কোনও বিষয় নাই। পুরনো কিংবা পেন্ডিং মামলার কাজ শেষ করা বা নিষ্পত্তি করা পুলিশের কাজ। পুলিশ তাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সেটা চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন ঘটনায় ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ৩০ হাজার ১৬৩টি অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ১৮ হাজার ৬৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১৯৫টি পিস্তল, ৬০টি রিভলবার, ৮০টি পাইপগান, ১৮টি শুটার গান, ১১টি রাইফেল, ২২টি ওয়ান শুটার, ৪৫টি বন্দুক, ৯০৭টি ককটেল, ৫২টি বোমা, ১৬৫৫ রাউন্ড কার্তুজ, ২৪টি একনলা বন্দুক, তিনটি দুই নলা বন্দুক, দুটি কাটা রাইফেল, একটি নাইন সুটার শটগান, ১০টি অন্যান্য অস্ত্র এবং দুই হাজার ১৫৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ