প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ভ্রুক্ষেপ নেই বিএনপির

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠানো হবে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বিএনপি। এই বিষয়ে নির্লিপ্ত বিএনপির নেতারাও। তবে, দলটির শীর্ষ পর্যায়ের তিন জন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের দুর্বলতা বেরিয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ দেশের মানুষ ভয়কে জয় করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। ফলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে সরকার পতনের আন্দোলনে কোনও প্রভাব পড়বে না।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠানো হবে। মানবিক কারণে সাজা স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতি সরকার দিয়েছে। তবে তারা যদি আবার বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তাকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কোনো চিন্তা করবেন না’।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘তারা (সরকার) এরকম কথা বলে আসছেন। আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটল। এসব নিয়ে খুব একটা চিন্তা, দুশ্চিন্তা নেই আমাদের। আমরা আন্দোলনে আছি, আন্দোলন করে যাবো’।
‘কে কী বললো, তাতে কিছু যায় আসে না’, উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা যে দুর্বল, এই বক্তব্য তার প্রমাণ। বোঝা গেলো তারা কত দুর্বল। আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট। এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আমরা অটল আছি’।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করছেন, যারা দেশের সংবিধান, আইন-কানুন, গণতন্ত্র বা মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলেছে, তারা এমন বক্তব্য দিতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু বলেন, ‘উনার বক্তব্য তো হয়েছে দেশের মালিকের মতো কথাবার্তা। কিন্তু দেশের মালিক জনগণ। এটা রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না’।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকারি দলের সমস্যা প্রকট’, বলে মনে করেন আমির খসরু। তার ভাষ্য, ‘এসব আমাদের সমস্যা না, যারা মন্তব্য করেন তাদের’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘খালেদা জিয়া তো মুক্ত নেই। তিনি তো জেলেই আছেন। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। দেশে আইন শাসন নেই, এসব তার প্রমাণ। জনগণ ভয়কে জয় করে রাস্তায় চলে এসেছে। জনগণ ভয় পেলে রাস্তার ওপর শুয়ে থাকে না। ভয় পেলে রিকশা, সাইকেলে করে সমাবেশে আসতো না। বিএনপি সব ভয়কে জয় করে ফেলেছে। তাই জনগণ এখন রাস্তায় নেমেছেন’।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা (কারাদণ্ড) হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে দফায় দফায় সরকার তার শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করছে। মাঝে মাঝে এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন তিনি।
চেয়ারপারসন কার্যালয়ের সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানের বাসভবন ফিরোজাতেই আছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে। বরাবরই দলের নেতারা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি করেন।
ইতোমধ্যে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ঘোষণা দিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ খালেদা জিয়ার কথায় চলবে। তবে দলের নেতারা তার মন্তব্যকে একেবারেই রাজনৈতিক বলে বিবেচনা করছেন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর বিএনপিসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়াকে আবারও কারাগারে পাঠানোর প্রসঙ্গটি আলোচনায় রয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, নেতাকর্মীদের ভয় দেখানোর জন্যই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন বক্তব্য এসেছে। বিশেষত, খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষ মুক্তির প্রসঙ্গে তার পরিবারের আবেদনের কথা উল্লেখ করায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেবল ‘বাতকে বাত’ হিসেবে দেখছেন না কোনো কোনো নেতা।
ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও বিএনপির চেয়ারপারসনকে কারাগারে পাঠানোর বক্তব্য দেন। যদিও তারপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর কোনও প্ল্যান সরকারের নেই। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর মুখে আবারও তা উচ্চারিত হওয়ায় বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার, বলে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান মনে করেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবশ্য তা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘মোটেই আন্দোলনে প্রভাব পড়বে না। আন্দোলন চাঙা হবে। ভয়ভীতির মধ্যে নেই মানুষ। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে- ভয়ভীতির পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে তাদের পতন ঘটানোর জন্য। জনগণ নির্বাচিত সরকার গঠন, জবাবদিহি সংসদ গঠনের জন্য রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। সেটা ভয়কে জয় করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানুষ আত্মত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে’।
প্রসঙ্গত, বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির সমাবেশ চলছে। আগামিকাল শনিবার বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ হবে। এতে দলের সিনিয়র নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। খবর বাংলাট্রিবিউনের

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ