শিশু আয়াতের দেহাবশেষ না পেলেও ঘরে মিলেছে রক্তের দাগ

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকায় শিশু আয়াত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার প্রধান অভিযুক্ত আবির আলীকে নিয়ে অভিযানের পরও পাওয়া যায়নি
শিশুটির দেহাবশেষ। তবে অভিযুক্তের ভাড়া বাসা থেকে একাধিক রক্তের দাগ ও বাথরুম থেকে একটি মাংস কাটার কাঠের গুঁড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রবিবার (২৭ নভেম্বর) হত্যায় অভিযুক্ত আবিরকে নিয়ে অভিযানে নামেন পিবিআই মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা ইসলাম। অভিযানের এক পর্যায়ে ফ্রি-পোর্ট এলাকার আকমল আলী রোডে আবিরের মা ও বোনের ভাড়া বাসায় যায় পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা। এ সময় এক রুমের সেই ভাড়া বাসার বাথরুমের সানশেডের ওপর, খায়ের খুঁটায় ও দেয়ালে রক্তের ছোপ দাগ দেখতে পায় তদন্ত কর্মকর্তারা। এছাড়াও বাথরুম থেকে মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি গাছের গুঁড়িও উদ্ধার করে পিবিআই। পিবিআই কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, আয়াতকে হত্যার পর এই গাছের গুঁড়িতে রেখেই ছয় টুকরো করা হয়।
এর আগে দুপুর ১২ টার দিকে অভিযুক্ত আবিরকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে আউটার লিংক রোডে অভিযানে যায় পিবিআই। এ সময় আবিরের দেওয়া তথ্যমতে, লিংক রোডের পাশে এবং আকমল আলী রোডের স্লুইচ গেটের খালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অভিযান চালায় পিবিআই। কিন্তু সেই সমস্ত এলাকায় কোনো আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে অভিযুক্ত আবিরের দেওয়া তথ্যমতে, তার মা ও বোনের ভাড়া বাসায় যায় পিবিআই টিম। আকমল আলী রোডের দ্বীন মোহাম্মদ ভবনের নিচতলার সেই ভাড়াবাসায় অভিযান চালায় পিবিআই। সেখান থেকে উদ্ধার হয় গাছের গুঁড়ি।
রক্তগুলো আসলেই শিশু আয়াতের কি-না তা ব্লাড স্ক্যানিং করে পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তারা।
অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন শিশু আয়াতের বাবা ও নানা। এ সময় আয়াতের নানা গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এতদিন পরও যেহেতু আমার নাতনির কোনো চিহ্ন তারা (পিবিআই) খুঁজে পাচ্ছে না, তাহলে আমার নাতনি হয়ত বেঁচে আছে। তারা (পিবিআই) ঠিকমত তদন্ত করছে না, আবিরকে রিমান্ডে ঠিকমত প্রশ্ন করলে সে সব বলে দেবে’।
ঘটনাস্থলে অভিযুক্ত আবিরকে দেখে স্থানীয়রা ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন।
এ বিষয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা আবিরের দেওয়া তথ্যমতে সব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের শরীরের অংশ পাওয়া না গেলেও আমরা হাল ছাড়ছি না’। ঘটনার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে নাঈমা বলেন, ‘সে তো বলছে মুক্তিপণের জন্যইএ কাজটি করেছে। এখনও পর্যন্ত এই তথ্যটি ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কোনো তথ্য নেই’।
গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পাশের মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা। ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত ১১ টার দিকে আকমল আলী সড়ক থেকে ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করা হয় আবিরকে। পরবর্তীতে শিশু আয়াতকে হত্যার পর মোট ছয় খন্ডে কেঁটে আলাদা আলাদা প্যাকেট করে সাগরে ও নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলে জানায় পিবিআই।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ