মানবাধিকার রক্ষাকারী হুমকি ও বাধার শিকার : সিজিএস

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে বাধার শিকার হচ্ছেন কর্মীরা। তৃণমূল পর্যায়ের অন্তত ৪৬ শতাংশ মানবাধিকারকর্মী মনে করেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ৬২ শতাংশ মানবাধিকারকর্মী নিজেদের ‘অনিরাপদ’ ও ‘খুবই অনিরাপদ’ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ৮৬ শতাংশ কর্মী কাজ করতে গিয়ে বাধার শিকার হন।
বেসরকারি সংস্থা সে› টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) ‘চ্যালেঞ্জেস টু হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফল গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিঙ্গুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ। অবশ্য এ অনুষ্ঠানেই প্রতিবেদনটির প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মাত্র ৫০ জন উত্তরদাতার তথ্য নিয়ে কোনো গবেষণা হতে পারে না।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে যে কেউ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ নিয়ে মানবাধিকার কমিশন কাজ করে থাকে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তৃণমূলের ৫০ জন মানবাধিকারকর্মীর অভিজ্ঞতা থেকে চার মাস আগে ৩৬টি জেলায় শুরু হয় এ গবেষণার কাজ। মার্কিন সংস্থা ন্যাশনাল এনডোর্সমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির (এনইডি) অর্থায়নে সিজিএস গবেষণাটি করেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড. আই. খান পান্না, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে গবেষক দলের প্রধান ড. আলী রীয়াজের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান, ‘আপনি একজন মার্কিন নাগরিক হয়েও কেন সেখানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গবেষণার পরিবর্তে বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে এলেন? আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ নাকি ভালো?’ জবাবে তিনি বলেন, এটা পরবর্তীতে একটা গবেষণার আইডিয়া হতে পারে। প্রতিবেদনটি তৈরির সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে কোনো তথ্য নেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। আমরা কোনো তদন্ত করছি না যে তাদের কাছে যাব’। মানবাধিকার রক্ষাকারী বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ স্বীকৃত মানবাধিকারের কাজ যারা করেন তারাই মানবাধিকারকর্মী।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৬ শতাংশ মানবাধিকারকর্মী দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতিকে গুরুতর বলে বর্ণনা করেছেন। ৪২ শতাংশ কর্মী জানান, আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তারা বেশি বাধার সম্মুখীন হন। ৬০ শতাংশ কর্মীরা মানবাধিকার রক্ষার কাজে বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হন। ব্যক্তিগতভাবে তারা শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মাত্র ৫০ জন উত্তরদাতার তথ্য নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যথেষ্ট কিনা তা প্রশ্নের দাবি রাখে। সাংবাদিকরাই বড় মানবাধিকার কর্মী। মানবাধিকারের কাজ করতে গিয়ে তাদের প্রাণও দিতে হচ্ছে। সর্বশেষ সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ড তার বড় উদাহরণ।
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সরকারি কোনো সংস্থা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের আইনি সংস্থা মানবাধিকার কমিশনের কথা শোনে। তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সব ভালো কাজের সংবাদ গণমাধ্যমে আসছে না। তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও বিদেশি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বলেন, অপরাধী যেই হোক, অপরাধীই। তবে নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ভূ-রাজনীতির সম্পর্ক আছে।
অ্যাডভোকেট জেড. আই. খান পান্না বলেন, গণতন্ত্র এখন নিলামে উঠেছে। ধনী ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে তা কিনে নিচ্ছেন। এমপি-মন্ত্রী হচ্ছেন। দেশ এখন ব্যবসায়ী ও আমলাদের হাতে চলে গেছে। রাজনীতিবিদরা আর দেশ চালাচ্ছেন না।
নুরুল কবির বলেন, মানবাধিকার কমিশনের সব সুপারিশ সরকার গ্রহণ বা প্রয়োগ করতে বাধ্য নয়। তিনি আরও বলেন, একাধিক আইন নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। সেখানে আইনের শাসন কীভাবে নিশ্চিত হবে?
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, মানবাধিকারকর্মীদের চাপ শুধু বর্তমান সময়েই নয়, ২০/২৫ বছর আগেও এই চাপ ছিল। মানবাধিকার কমিশন থাকার পরেও সেখানে গিয়ে প্রতিকার পাওয়া কঠিন হয়।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ