মিরসরাইয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে কিশোর নিহতের ঘটনায় মামলা

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে রায়হান হোসেন রুমন নামে এক কিশোর নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রুমনের মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে জোরারগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে। মামলায় ১৫ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ এবং ৭০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশের সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মনিরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে নিহত রায়হান হোসেন রুমনের মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে ১৫ জন এজাহার নামীয় ও ৭০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।
জানা গেছে, মামলার ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বেলা আড়াইটার দিকে রুমনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে চট্টগ্রাম থেকে পাতাকোট গ্রামে (রুমনদের ভাড়াবাসা) নিয়ে আসা হয়। বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আজমপুর বাজারে ঈদগা মাঠে প্রথম জানাজা শেষে লাশ জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গুচ্ছগ্রামে দ্বিতীয় জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।
রুমনের মা খালেদা বেগমের সঙ্গে আজ শনিবার কথা হলে বলেন, ‘আমি ছেলেকে আর ফিরে পাব না, কিন্তু খুনিদের বিচার চাই। কেউ বলছে আমার ছেলেরে বিএনপি মারছে, কেউ বলছে আওয়ামী লীগ মারছে, এখন শুনতেছি আমার ছেলে ছাত্রলীগ করত। ছেলে বাইরে থাকে সারা দিন। আমি তো কিছুই জানি না। তিন বছর আগে ছেলে পড়ালেখা বন্ধ করে। ওসমানপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। বর্তমানে বাজারে পানির পাম্পে চার হাজার টাকা বেতনে চাকরি করত। আমি রাজনীতি বুঝি না। এতিম ছেলেকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চাই’।
জানা গেছে, আগামি ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চ উপলক্ষে মিরসরাইয়ে একটি পথসভা করার কথা রয়েছে। রোডমার্চের পথসভা সফল করার জন্য মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয় নুরুল আমিনের বাড়িতে।
সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি-যুবদলের নেতা-কর্মীরা যোগদান করেন। তখন আজমপুর বাজার ও মুহুরি প্রজেক্ট বাজারে গাড়ি তল্লাশি করে নেতা-কর্মীদের মারধর করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে নুরুল আমিনের মতবিনিময় সভা চলাকালে সেখানে খবর পৌঁছে আজমপুর বাজারে যুবলীগ-ছাত্রলীগ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিএনপি-যুবদল কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। সেখানে অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।
খবর শুনে বিএনপি-যুবদল কর্মীরা সংগঠিত হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজনকে ধাওয়া করলে তাঁরা পিছু হটে। এ সময় হামলায় ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হওয়ার দাবি করে বিএনপি।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দাবি- গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে স্থানীয় ওচমানপুর ইউনিয়ন এলাকার আজমপুর বাজারে বিএনপির লোকজন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় ওচমানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হাসান, মিরাজ, আরেফিন, সাঈদ খান দুখু, রাফিসহ পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হন।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাসুদ করিম রানা বলেন, নিহত জাহিদুল ইসলাম রুমন ছাত্রলীগের কর্মী। বিএনপির নেতা-কর্মীরা রুমনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাকে পিটিয়ে পুকুরের ফেলে দেওয়া হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষ খুন করা, অগ্নিসংযোগ করা বিএনপির পুরোনো চরিত্র। তাদের মিরসরাইতে আর সে সুযোগ দেওয়া হবেন। রুমনকে তাদের দলীয় ছাত্রসংগঠনের কর্মী বলেও দাবি করেন’।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, আগামি ৫ অক্টোবর কর্মসূচির প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে। সভা শেষে ফেরার পথে আজমপুর বাজারে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হন। আহতরা হলেন যুবদল নেতা হানিফ, জিয়া উদ্দিন জিয়া, সালাউদ্দিন বাবু, নুর হোসেন বাদশা, মোহাম্মদ মিঠু, আরিফ মাইনুদ্দিন, রানা, মোজাম্মেল হোসেন, মাসুদ কালা, মোহাম্মদ তারেক, রাজু, রাকিব হোসেন, মোহাম্মদ নাসির সাইফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, জিলানী মিঝি, জামশেদ আলমসহ ১৫ জন। আহতদের মিরসরাই ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রাত ৮ টার দিকে আওয়ামী লীগের লোকজন ওচমানপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘরের ভেতরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার খোন্দকার নোমান সাঈরী বলেন, আহত পাঁচজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। রুমন (১৬) নামে একজনকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তাঁর মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে মনে হচ্ছে। আহতদের মধ্যে হাসান নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে চমেকে প্রেরণ করা হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর