খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইন যা বলে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। ওই ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়া মুক্তি দেওয়ার কথা। এখন সরকারই শর্তহীনভাবে মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে হলে আবার জেলে যেতে হবে। এরপর আদালতে আবেদন করতে হবে। আদালত অনুমতি দিলে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় সরকারকে দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। ৪০১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয় সেই শর্তে তাঁর দণ্ড কার্যকরীকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবে।
৪০১ (২) ধারায় বলা আছে, যখন কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়, তখন যে আদালত ওই দণ্ড দিয়েছিলেন বা অনুমোদন করেছিলেন সেই আদালতের প্রিসাইডিং জজকে সরকার ওই আবেদন মঞ্জুর করা উচিত কিংবা মঞ্জুর করতে অস্বীকার করা উচিত, সে সম্পর্কে তার মতামত ও মতামতের কারণ বিবৃত করতে এবং এই বিবৃতির সঙ্গে বিচারের নথির নকল বা যে নথি বর্তমানে আছে সেই নথির নকল পাঠানোর নির্দেশ দেবে।
৪০১ (৩) ধারায় বলা আছে, যেসব শর্তে কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হয়েছে, তার কোনোটি পালন করা হয়নি বলে মনে করলে সরকার স্থগিত বা মওকুফের আদেশ বাতিল করবে এবং অতঃপর যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত রাখা মওকুফ করা হয়েছিল; তিনি মুক্ত থাকলে যেকোনো পুলিশ অফিসার তাঁকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবেন এবং তাঁর দণ্ডের অনতিবাহিত অংশ ভোগ করার জন্য তাঁকে জেলে পাঠানো যাবে।
(৪) ধারা অনুযায়ী, সেই শর্তে এই ধারার অধীন দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় যা, যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় সেই ব্যক্তি পূরণ করবে বা শর্ত এমন হবে, যা পূরণে তিনি স্বাধীন থাকবেন।
আর ৪ (ক) ধারায় বলা আছে, এই বিধি বা অন্য কোনো আইনের কোনো ধারা অনুসারে কোনো ফৌজদারি আদালত কোনো আদেশ দিলে তা যদি কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব করে অথবা তাঁর বা তাঁর সম্পত্তির ওপর দায় আরোপ করে তা হলে উপযুক্ত উপধারাসমূহের বিধান এই আদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
(৫) ধারায় বলা আছে, প্রেসিডেন্টের অনুকম্পা প্রদর্শন, দণ্ড স্থগিত রাখা বা কার্যকরীকরণে বিলম্ব ঘটানো বা মওকুফ করার অধিকারে এই ধারার কোনো কিছু হস্তক্ষেপ করবে বলে মনে করা যাবে না।
৫ (ক) ধারায় বলা আছে, প্রেসিডেন্ট কোনো শর্ত সাপেক্ষ ক্ষমা মঞ্জুর করলে উক্ত শর্ত যে প্রকৃতিরই হোক না কেন, তা এই আইন অনুসারে কোনো উপযুক্ত আদালতের দণ্ড দ্বারা আরোপিত শর্ত বলে গণ্য হবে এবং তদনুসারে বলবৎ যোগ্য হবে।
৪০১ (৬) ধারায় বলা আছে, সরকার সাধারণ বিধিমালা বা বিশেষ আদেশ দ্বারা দণ্ড স্থগিত রাখা এবং দরখাস্ত দাখিল ও বিবেচনার শর্তাবলি সম্পর্কে নির্দেশ দিতে পারবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। একই ক্ষমতাবলে সরকার তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে পারে। এর জন্য আদালতে যেতে হবে- এটি ঠিক না। কেননা ৪০১ ধারায় সরকারকে সব রকম ক্ষমতা দেওয়া আছে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তাঁর সাজার রায় আসে।
দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। শর্ত দেওয়া হয়, তাঁকে দেশেই থাকতে হবে।
কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজায় ওঠেন, এখনো তিনি সেখানেই থাকছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়াকে কয়েক দফায় ঢাকার বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকেরা। এখনো খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গতকাল শুক্রবার তাঁকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর আবার কেবিনে আনা হয়। গত কয়েক দিন তাঁকে বেশ কয়েকবার কেবিন থেকে সিসিইউতে নিতে হয়।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ