মালিকপক্ষ দেবে ১০ লাখ করে, সরকার দেবে ২ লাখ

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ।  এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে নিহত প্রতি পরিবারকে ২ লাখ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।
রবিবার (৫ মে) সন্ধ্যায় বিএম কনটেইনার ডিপোর জিএম ও সাবেক ডিআইডি প্রিজন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।  ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বিএম কনটেইনার মালিকপক্ষ এই ঘটনায় গভীর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।  সেই সঙ্গে দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।  যারা গুরুতর আহত হয়েছেন কিংবা অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন তাদেরকে ৬ লাখ টাকা করে এবং অপরাপর আহতদের ৪ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর থেকে ২০টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আহতদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকে।  রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  বিনামূল্যে ওষুধের জন্য চারটি দোকানকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  আহতদের রক্তদানের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি প্রায় ৫০০ জনকে কোম্পানির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  ইতোমধ্যে প্রায় ২৮০ জন স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে রোগীদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।  সেই সঙ্গে আহতদের সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে।
এতে আরও বলা হয়, এই মর্মান্তিক ঘটনায় বিএম কনটেইনারের কোনো কর্মচারী নিহত হলে তাদের পরিবারে শিশু থাকলে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবারকে বেতনের সমপরিমাণ টাকা দেওয়া এবং চাকরির উপযুক্ত কোনো সদস্য থাকলে চাকরির ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিএম কনটেইনার ডিপো মালিকপক্ষ বিবৃতিতে আরও বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  এছাড়া সরকার গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
২ লাখ টাকা করে দিবে সরকার
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুল হক।  তাদের মধ্যে ১৩টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।  যাদের ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য।  বাকিদের পরিচয় এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।  এই ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৬৩ জন আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন।
রবিবার (৫ জুন) সন্ধ্যা ৬ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মমিনুল হক।  এর আগে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৯ জন মারা গেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মমিনুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৪৫ জন।  যাদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য।  ৪৫ জনের মধ্যে ১৩টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে’।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৬৩ জন আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আহতদের মধ্যে আটজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টার করে ঢাকা পাঠানো হয়েছে’।
নিহতদের সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যে ১৩ জনের লাশ শনাক্ত করা গেছে তাদের পরিবারের কাছে আজকেই ক্ষতিপূরণের এই টাকা হস্তান্তর করা হবে’।  এর বাইরে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও জানান মমিনুল হক।
পাশাপাশি উদ্ধার ও উদ্ধার পরবর্তী আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসক, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ স্থানীয় নাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ডিসি/এসআইকে/সিসি