নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে আহত রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসতেই শত শত স্বেচ্ছাসেবক বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহযোগিতার হাত। অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণও করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। রোগীদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ওষুধপত্র কিনে দেয়ার কাজও করছেন কেউ কেউ। কেউ আবার খাবারের ব্যবস্থা করছেন। যার যেমন সামর্থ তেমনি প্রত্যেকে এগিয়ে এসেছেন অগ্নিদগ্ধদের পাশে। তবে অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে রোগীসহ হাসপাতালে আসা লোকজনকে। বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন, নানাবিধ প্রতিষ্ঠান ও তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা এতে যোগ দেয়। কেউ পানি, প্রয়োজনীয় শুকনো খাবারের যোগান, কেউ রক্তদাতা খুঁজে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থাপনায় যেমন সহযোগিতা করেছেন, তেমনি অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক হাসপাতালে কোনো রোগী আসা মাত্রই তাদের দ্রুততার সাথে চিকিৎসকের কাছ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। হাসপাতালের ডিউটিরত চিকিৎসক, ইন্টার্নি চিকিৎসক, নার্স, আয়া-সহযোগি- সবাই রোগীদের সেবা দিতে যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখন ছুটিতে থাকা কিংবা ডিউটি শেষ করে যাওয়া চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় সবাই যোগ দিয়েছেন সেবা কাজে।
রোগী হাসপাতালে আসার সাথে সাথে স্বেচ্ছাসেবকরা জরুরি বিভাগে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে আহতদের ওয়ার্ডে পৌঁছে দিচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ আবার রক্ত ম্যানেজ করে দিচ্ছেন। কেউ ছুটছেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর নিয়ে। মানবিক মানুষজনও খাবার থেকে শুরু করে নানা ধরনের সামগ্রী নিয়ে ছুটছেন হাসপাতালের মধ্যে। তাছাড়াও রোগীদের স্বজনদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করার কাজেও সহযোগিতা করছেন অনেকে। এ যেন সহায়তা-সহমর্মিতা-মানবতার নজীর গড়লেন চট্টগ্রামবাসী।
অগ্নিদগ্ধদের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদা নিয়ে মানবিক স্বেচ্ছাসেবকরা ছুটে আসেন হাসপাতালে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের আত্মীয়-স্বজন, উৎসুক সাধারণ মানুষের ভীর বাড়ায় রোগীদের সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।
হেল্প ডেক্স স্থাপন করে তথ্য দিয়েছে চমেক ছাত্রলীগও। চমেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. আল-আমিন ইসলাম শিমুল বলেন, আমরা হেল্পডেস্কে সকলের অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। নগদ অর্থ দিতে আমরা সবাইকে নিরুৎসাহিত করছি, বলেছি- হেল্পডেস্ক থেকে ওষুধের তালিকা সংগ্রহ করে আপনারা ওষুধ কিনে দিন। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা রোগীদের কাছে দিবেন। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকার ওষুধ পত্র আহতদের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে দিতে পেরেছি।
অগ্নিদগ্ধদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবক দলগুলোর মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করতে দেখা যায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশসহ কয়েকটি সংগঠনের কর্মীদের।
গাউছিয়া কমিটির মানবিক সেবা কর্মসূচির সদস্য মো. এরশাদ খতিবী বলেন, ঘটনাস্থলে সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও ফেনীর দেড়শো সদস্য উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছেন। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে দগ্ধ, আহত ও মৃতদের আনা নেওয়ার কাজে চারটি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে। আহতদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১ হাজার জন সদস্য চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
রোগীদের ওষুধপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেকে। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে অজ্ঞাতদের জন্য মেডিকেল এলাকার হাসান ফার্মেসী বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করেছে। তাছাড়া অনেক মানবিক মানুষ বিভিন্ন ধরনের খাবার, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে অগ্নিদগ্ধদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন।
সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠনগুলোও। স্পৃহা ব্লাড ডোনেশন সোসাইটি, হালিশহর ব্লাড ব্যাংকসহ সামাজিক সংগঠন ভোরের আলো, নিসর্গচারী ট্যুরিজম ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে হাসপাতালে থেকেছেন। চট্টগ্রামের অনেক ফার্মেসীর দোকান কর্তৃপক্ষও তাদের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে দিয়েছেন। অনেকে ঘটনাস্থলে আসতে না পারলেও কিংবা সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে হাসপাতালে না আসা বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সহায়তা নিতে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। রক্ত প্রয়োজন, ওষুধ প্রয়োজন, রোগীদের স্বজনদের মধ্যে যাদের থাকা ও খাওয়ার সমস্যা তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাকরণের জন্য যোগাযোগ নম্বর দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের মানুষ অতিদ্রুততার সাথে যেভাবে মানবিক এই বিপর্যয়ে সাড়া দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন তা অনন্য নজীর সৃষ্টি করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
ডিসি/এসআইকে/আরএআর