কচুরিপানায় দুর্ভোগ কাপ্তাই হ্রদে

রাঙামাটি প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাইয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় অধিবাসী ও পর্যটকেরা। এ হ্রদকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো পর্যটকদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে। পাহাড়গুলোর ভাঁজে ভাঁজে বসবাস করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আদিবাসীসহ অসংখ্য মানুষ। তাদের প্রধানতম যাতায়াতের পথ হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ। অন্যদিকে হ্রদের সৌন্দর্য্য ও নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পাহাড়ঘেরা অপার সৌন্দর্য্যতা উপভোগ করতে দেশ- বিদেশ থেকে বহু পর্যটক আসেন রাঙামাটিতে।
বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কচুরিপানার স্তূপ পর্যটক-স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। এই কচুরিপানার ফলে লেকে আটকা পড়ে সারারাত কাটানোর নজীর সৃষ্টি হয়েছে পর্যটকদের। এছাড়াও ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে কচুরিপানায় আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয়দের মতে, বর্ষা মৌসুমে সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কচুরিপানা এসে হ্রদে একাকার হয়ে গেছে। কচুরিপানার জঞ্জালে মারাত্মক দূষণের শিকার কাপ্তাই হ্রদ। কচুরিপানা পঁচে-গলে হ্রদের পানিকে দূষিত করে তুলেছে। আর এ হ্রদের পানি ব্যবহার করে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহভাবে কচুরিপানার জঞ্জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদ।
হ্রদে জমে থাকা কচুরিপানার জঞ্জালে নৌ চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পর্যটকসহ হাজারো মানুষ। গত বুধবারেও পর্যটকবাহী একটি বোট শুভলং ঝর্ণা থেকে আসার পথে কচুরিপানার মাঝখানে আটকে যায়। প্রায় ৪ ঘণ্টা চেষ্টা করেও কচুরিপানা থেকে বের হতে পারেনি বোটটি। পরে পুলিশের সহায়তায় ১ ঘণ্টা কচুরিপানা কাঁটার পর তাদের উদ্ধার করা হয়। তারও কয়েকদিন আগে কচুরিপানায় আটকে থেকে নৌকাতেই রাত কাটিয়েছেন বেশ কয়েকজন পর্যটক। এছাড়াও এই হ্রদ দিয়ে রাঙামাটি সদরসহ কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকলের বিভিন্ন নৌ যাতায়াত পথে কচুরিপানা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এলাকাগুলোতে যাতায়াতকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আটকা পড়ছেন হরহামেশাই। কচুরিপানায় আটকে গিয়ে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর কিছু কিছু নৌযান ছুটতে পারলেও অধিকাংশই চরম দুর্ভোগে পরেন। কচুরিপানার সাথে বড় বড় বাঁশ, কাঠ, নানানজাতের গাছের ডাল ও আস্ত গাছ এই দুর্ভোগকে আরো ত্বরান্বিত করেছে।
জানা গেছে, এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের।
সর্বশেষ গত বুধবার শুভলং থেকে আসা শাফায়াত জানান, শুভলং থেকে আসার পথে তাদের বোট কচুরিপানায় আটকে যায়। কচুরিপানা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চালালে এক পর্যায়ে বোটের পাখা ভেঙে যায়। বোট চালক তৎক্ষণাৎ আরেকটি পাখা লাগানোর পর কচুরিপানা থেকে মুক্ত হতে পারলেও সেটিও ভেঙে যায়। পরে রিজার্ভ বাজারের একটি বোট কোম্পানির সহায়তায় তিন ঘণ্টা পর সেখান থেকে উদ্ধার হন তিনি।
বিলাইছড়ি থেকে আসা বোট চালক জাকির জানায়, বিলাইছড়ি থেকে আসার সময় কচুরিপানার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষায় হ্রদের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানাও বাড়তে থাকে। যার কারণে স্বাভাবিক গতিতে বোট চলতে পারে না। তাই আগের থেকে এখন কিছুটা সময় বেশি লাগছে।
এমতাবস্থায় কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকেরা।
রাঙামাটি মৎস্য কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাপ্তাই হ্রদে শুভলং থেকে কাইন্দার মুখ পর্যন্ত যেখানে জেলেদের মাছ ধরার স্থান সেখানে কচুরিপানার ঝাঁক পরিষ্কার করা হচ্ছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান জানান, কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা অপসারণের জন্য ইতোপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএফডিসি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে হ্রদের কচুরিপানার জঞ্জাল পরিষ্কার করা যায়। আশা করছি দ্রুতই এই দুর্ভোগের অবসান হবে। দ্রুতই আমরা এগুলো অপসারণ করে পর্যটক আর স্থানীয় অধিবাসীদের দুর্ভোগ লাঘব করা হবে।

ডিসি/এসআইকে/এমকে