চট্টগ্রামে বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
পুরোনো গ্লানি আর হতাশা ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় ১৪২৯ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা।  বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীকী উপস্থাপনের নানান বিষয় স্থান পেয়েছে।  শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।  মঙ্গল শোভাযাত্রা চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ীসহ নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়।  গ্রীষ্মের তাপদাহ উপেক্ষা করে উৎসবপ্রিয় বাঙালি শোভাযাত্রায় অংশ নেন।  ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় বাঙালির এই শোভাযাত্রা।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘিরে নগরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়।  মোতায়েন আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছি আমরা।  সুষ্ঠুভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হয়েছে।  চারুকলা অনুষদে এবারের আয়োজন চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরীর ৯০তম জন্মবাষির্কীতে তাঁকে উৎসর্গ করা হয়েছে।  সেই প্রেক্ষিতে চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরীর স্লোগান ‘শিল্পের প্রয়োজন- বিবেকের জন্য, জীবনের জন্য’কে প্রতিপাদ্য করা হয়েছে।  নববর্ষে চারুকলা চত্বরে দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন চলছে।
এদিকে বাংলা বর্ষবরণ-১৪২৯ উপলক্ষে ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকাল ৯ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে বাদ্যের তালে তালে বাংলা ঐতিহ্যের উপকরণ পালকি, পুতুল, ঘোড়ার গাড়ি, প্ল্যাকার্ড ও অন্যান্য উপকরণ নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।  শোভাযাত্রাটি দামপাড়া এম এম আলী সড়ক ঘুরে পুনরায় শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম রশিদুল হকসহ জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা শিল্পকলা-শিশু একাডেমির কর্মকর্তা, প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণার্থী, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল ১০ টায় শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তিকার ফারুক তাহেরের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম রশিদুল হক। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ মাহমুদ উল্ল্যাহ মারূফ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) মো. মাসুদ কামাল, শিল্পকলা একাডেমির জেলা কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন সিকদার, শিশু একাডেমির জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মুহাম্মদ নুরুল আবছার ভূইয়া প্রমুখ।
শেষে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাংকন ও কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।  সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর দলীয় নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন।  শিল্পীরা ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানে গানে বরণ করে নেন বাংলা নববর্ষকে।  নাচে-গানে জমজমাট ছিল পুরো শিল্পকলা একাডেমি।
বৈশাখকে বরণ করে নিতে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনও।  এবার রমজান মাস হওয়ায় পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের আয়োজন নেই।  তবে নববর্ষ বরণে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই।

ডিসি/এসআইকে/আরসি