রাত পোহালেই কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী, নানান আয়োজন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় বৈশাখ মানেই বিশেষ কিছু।  মে মাস পড়লেই, বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে প্রবাদপ্রতীম এক কিংবদন্তীর জন্মোৎসব পালনের জন্য।  বাঙালি বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, তার কাছে ২৫ বৈশাখ দিনটার গুরুত্বই আলাদা!  এদিনটা যে বিশ্ববরেণ্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।  আগামিকাল ২৫ বৈশাখ, কবিগুরুর ১৬১তম জন্মজয়ন্তী।
উপমহাদেশের প্রথম নোবেলজয়ী, তথা ইউরোপের বাইরের কোনো দেশের নাগরিক হিসাবে প্রথম নোবেল পুরষ্কারের সম্মান পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  এদিকে দুই বাংলার বুকেই সাজো সাজো রব ২৫ বৈশাখকে ঘিরে।  যেদিন জোড়াসাঁকো থেকে শান্তিনিকেতন মেতে ওঠে কবির বন্দনায়।  তার সাহিত্যদর্শন যুগ যুগ ধরে মানুষকে ছুঁয়ে গিয়েছে, যার রেশ চিরন্তন।  আর এমন এক ব্যক্তিত্ব কার্যত বাঙালি জীবনের মহীরুহ হয়ে উঠেছেন।
বঙ্গভূমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬৮-১৯৪১) পরিচয় সাহিত্যিক হিসেবে সর্বজনগ্রাহ্য।  তবে রবীন্দ্রনাথকে শুধুই একজন সাহিত্যিক বললে তাঁর পরিচয়কে সীমানা প্রাচীরে আবদ্ধ করে দেওয়া হবে।  মানবজীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তার অবাধ বিচরণ ছিল না।
রবীন্দ্রনাথের বেশিরভাগ সৃষ্টিকর্মে সহজ, সামগ্রিক এবং সাম্য ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে।  উদার সংস্কৃতির জগত তাকে বাঙালির আত্ম-অন্বেষণে যেমন সহায়তা করেছে, তেমনি বাঙালি সংস্কৃতির রূপকারও হয়ে উঠেছেন তিনি।  তীব্র বিরোধীতার মুখোমুখি হয়েও আজও তিনি বাঙালির কবি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শৈশব থেকে সঙ্গীত শ্রবণের মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠেছেন।  তার বাবা ফরাসি কবি রুমী ও হাফিজের ভক্ত ছিলেন।  ইসলামের সুফিবাদ ও বাউল মতাদর্শের প্রতি ভীষণ আকর্ষণও ছিল তার।  ছেলেদের ফারসি ভাষা শিক্ষাদানের জন্য বাড়িতে ফারসি মুন্সীও নিয়োগ দিয়েছিলেন।  রবীন্দ্রনাথের মানস গঠিত হয়েছে বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে।  যে কারণে তার সাহিত্যে এর প্রচ্ছন্ন প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়।
১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার জন্য প্রথম কুষ্টিয়ার শিলাইদহে আসেন।  এখানে এসেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাউল মতবাদের একটি সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  তিনি বাউল গানের ভাব সাধনা এখান থেকেই ওলোট-পালোট করে দেখেছেন, জেনেছেন বাউলদের সম্পর্কেও।  তার সাহিত্যকর্মে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয়োগান ক্রমেই ধ্বনিত হতে থাকে।  ফলে এক সময় শিক্ষিত মধ্যবিত্তের বলয় থেকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষের কবি।
কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকীর যত আয়োজন
কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল ৮ মে দুপুর আড়াইটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি উপস্থিত থাকবেন।  অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর।  স্মারক বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা।  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির পরিবেশনায় নৃত্যনাট্যসহ ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমি তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী এবং কবির ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারির মাসব্যাপী প্রচারের ব্যবস্থা করবে বলেও জানিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ঢাকাসহ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।  এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে।  বাংলা একাডেমিসহ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব দফতর ও সংস্থা এ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
এছাড়া নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের তত্ত্বাবধানে ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করবে।  যেসব জেলায় জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে না, সেসব জেলার জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় কমিটি গঠন করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ