কর্ণফুলীতে মাটি খুঁড়তেই বেড়িয়ে আসছে প্রাচীন নিদর্শন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
প্রচলিত রয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া নামক স্থানে একসময় আরাকান রাজা রাজ বিক্রমের বাড়ি ছিল। গবেষণায় উঠে এসেছে, পার্শ্ববর্তী উপজেলা আনোয়ারার ঝিওরি, হাজীগাঁও বটতলীসহ কর্ণফুলীর বড়উঠান এবং জুলধা এলাকাজুড়ে সপ্তম-অষ্টম শতকে পণ্ডিত বিহার নামে একটি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ষোড়শ শতকের দিকে সেটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক এই স্থানে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম জেলায় এটিই প্রথম প্রতœতাত্ত্বিক খনন।
জানা গেছে, বর্তমানে বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে আসা মোট ১০ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক দেয়াঙ পাহাড় খননে কাজ করছেন। কাজ শুরু হওয়ার পর এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে হাজার বছরের পুরোনো চওড়া ইটের দেয়াল ও ভবনের মেঝে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে, আরও কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনার।
কথিত আছে, একসময় আরাকান রাজাদের রাজধানী ছিল এ দেয়াঙ। ১৫১৮ সালে পর্তুগিজ বণিকরা চট্টগ্রামে এসে দেয়াঙ পাহাড়ে বসতি স্থাপন করেন। এখানে আরাকানিরা একটি কারাগারও তৈরি করেছিলেন। ধারণা করা হয়, ওই কারাগারেই মধ্যযুগের বিখ্যাত বাঙালি কবি আলাওলকে বন্দি করে রেখেছিল আরাকানিরা। সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহ সামরিক সাহায্যের বিনিময়ে ১৫৩৭ সালে পর্তুগিজ বণিকদের দেয়াঙ পাহাড়ে কুঠি ও গির্জা নির্মাণের অনুমতি দেন। মোগল আমলে আরাকানি সৈন্যরা ফিরিঙ্গি বন্দর ও ফিরিঙ্গি পল্লির কাছে তিনটি ঘর তৈরি করে। ১৬৬৬ সালের দিকে মোগল সেনারা আরাকানিদের পরাজিত করে দেয়াঙের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেন। ধারণা করা হয়, তখন এখানকার রাজাদের পতন ঘটে এবং তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এখানে খনন শুরুর পর কাজ পরিদর্শনে আসেন জাপানি একদল গবেষক। এ ছাড়া গত বুধবার ইউনেস্কো ঢাকা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজান ভাইজও খননকাজ পরিদর্শন করেন। গতকাল খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিদর্শন করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে সচিব খলিল আহমদ স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখানে ঐতিহাসিক স্থাপনা পাওয়া গেলে তা সংরক্ষণ করা হবে, নির্মাণ হবে জাদুঘর’।
সরকার সব সময় স্থানীয়দের মতামতের গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে সচিব বলেন, এখানে স্থানীয়দের ক্ষতি হয় এমন কোনো কার্যক্রম করা হবে না। ভবিষ্যতে জাদুঘর বা স্থাপনা সংরক্ষণের প্রয়োজনে যদি ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে ভূমি মালিকদের ন্যায্যমূল্য পরিশোধ করা হবে। পরে পরিদর্শক দল বড়উঠানের জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, দেয়াঙ পাহাড়ের মরিয়ম আশ্রম উপাসনালয় এবং মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের গণকবর পরিদর্শনে যান।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ