উত্তর কাট্টলীতে বিএনপির সমন্বিত ত্রাণ বিতরণ, প্রচারে অনীহা

এসএম রিফাত, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
অনেকটা নিরবেই দলীয় নেতা-কর্মী, তাদের আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশী মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ও এর তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।  চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশদ্বারখ্যাত উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে এই খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে বিএনপি। এখানকার মতোই নগরের অন্যান্য ওয়ার্ড, থানা, জেলা-উপজেলায় অনেকটাই নিরবে এসব খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে বিএনপি। তবে তাদের এই কার্যক্রম সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যাপারে অনিহা দেখা গেছে। এই বিষয়টি অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সাধারণ নেতা-কর্মীদের মতে- প্রচারহীনভাবে নিরবে দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক ছাড়াও এলাকার অপেক্ষাকৃত কষ্টে থাকা মানুষদের ঘরে ঘরে এসব খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে দলটির বিশেষ ত্রাণ কমিটি।
জানা গেছে, উত্তর কাট্টলীতে প্রথম দিকে নির্বাচনী কেন্দ্র ভিত্তিক খাদ্য সহায়তা দেয় দলটি। এরপর দলীয় নেতা ও কর্মীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ঘরে ঘরে এসব খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ড বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা নগর বিএনপির এক নেতার পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে প্রথম ধাপে ২৮৭ এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪৫০ পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। আরো ৩০০ পরিবারকে এই খাদ্য সহায়তা প্রদানের প্রস্তুতি চলছিল মঙ্গলবারও। ওই নেতার উদ্যোগে ওয়ার্ড-থানা ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে এসব খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।  শুধু উত্তর কাট্টলীতে নয়, উত্তর পাহাড়তলী ও দক্ষিণ কাট্টলীতেও এসব খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে নিরবেই। তবে এই সংবাদ তৈরির সময়কালে দলটির নেতাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা অনুরোধ করেন খাদ্য সহায়তা নিয়ে যেন সংবাদ করা না হয় অথবা সংবাদ করলেও যেন দলের কথাই বলে।
সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডেই আরো ৬০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাউল বিতরণের জন্য একটি বিশেষ ত্রাণ সহায়তা কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই ফান্ডে দলীয় নেতা-কর্মীরা যে যার সামর্থ অনুসারে টাকা দিচ্ছেন খাদ্য সহায়তার জন্য। তবে নগরের সেই নেতা জানান, এসব সহায়তা আমার পক্ষ থেকে নয়, আমাদের ওয়ার্ড, থানা বিএনপির উদ্যোগে দেয়া হচ্ছে। আমি দলের কর্মী হিসেবে সহায়তা করছি। কারণ দল থাকলেইতো আমি আছি। দল না থাকলে আমার অস্তিত্বও থাকবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলটির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দেয়া খাদ্য সামগ্রীর প্রথম ধাপের ২৮৭ পরিবারকে ৭ কেজি চাউল, ৩ কেজি আলু, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিড়া, ১ কেজি মসর ডাল, ১ কেজি ময়দা, আধা কেজি লবণ এবং ১ কেজি চিনি দেয়া হয়েছে। এরপরের ধাপে ৪৫০ পরিবারের প্রতিটিতে ৫ কেজি চাউল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিড়া, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি ময়দা, ১ কেজি চিনি দেয়া হয়। সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয়ধাপে আরো যে ৩০০ পরিবারে খাদ্য সহায়তা প্রদানের প্রস্তুতি চলছে তা রমজানের দু-একদিন আগে বিতরণ করা হবে। এতে প্রতি পরিবারের জন্য থাকবে- ২ কেজি চনা, ২ কেজি চাউল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি চিরা, ১ কেজি তেল, ১ কেজি মসুর ডাল। আর খাদ্য সহায়তার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নিজস্ব অর্থায়নে যে তহবিল গঠন করা হয়েছে, সে তহবিল থেকে প্রথমধাপে ৬০০ পরিবারের প্রতিটিতে ১০ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হবে। পরবর্তীতে এসব খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। এই ত্রাণ সহায়তা কমিটিতে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম সেক্রেটারিকে আহ্বায়ক, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রফিক উদ্দিন চৌধুরী যুগ্ম আহ্বায়ক, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্বাস রশিদকে সদস্য সচিব ও রহিম উদ্দিন চৌধুরীকে যুগ্ম সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।                                                                                          নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর কাট্টলীর বাসিন্দা মো. মনজুরুল আলম মঞ্জু দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, শুধু উত্তর কাট্টলী নয়, পুরো নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের এই কার্যক্রম চলছে। লকডাউনের এই সময়ে মানুষ নিদারুণ কষ্টে আছেন। তাদের সেই কষ্ট লাঘবের ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে আমাদের দল বিএনপি তার সামর্থের মধ্যে যতটুকু সম্ভব হচ্ছে সমন্বয় করে তা করার চেষ্টা করছে মাত্র।

ডা. শাহাদাত হোসেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, মানুষ কষ্টে আছে। আমরা চাই না মানুষের সেই কষ্ট আরো বারুক। বিএনপি তার সামর্থের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যাতে কষ্টে থাকা মানুষগুলো অন্তত কিছুটা সহায়তা পায়। তিনি বলেন, বিএনপি সারাদেশব্যাপিই কষ্টে থাকা সাধারণ মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।  এটি সেন্ট্রালি মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও দলীয় নেতা-কর্মীরা যে যা পারছেন এলাকার মানুষদের সহায়তা করতে চেষ্টা করছেন। আমিও ব্যক্তিগতভাবে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরে ১০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। আরো ১০ হাজার পরিবারকে একই সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রস্তুতি চলছে।  এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উত্তর কাট্টলীসহ নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপি ত্রাণ সহায়তা কমিটি গঠন করেছে। এসব কমিটি দল নির্দেশিত পদ্ধতিতে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা দিতে কাজ করছে। এসব সহায়তার ডাটাও আমাদের আছে (পুরো ডাটা দৈনিক চট্টগ্রামকে সরবরাহ করেছেন তিনি)। 
আরেক প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, এই সরকার যেভাবে বলছে মানুষকে ঘরে থাকতে, তাদের ঘরে সরকারি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিবে। সেভাবে কিন্তু করা হচ্ছে না। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন যে সরকারি ত্রাণ কিভাবে লুট হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা জনগণের প্রতি নেই। তাই জনগণকে খাদ্য সহায়তা দিতে প্রহসন করা হচ্ছে। বিএনপি সেই কষ্টে থাকা মানুষগুলোর পাশে আছে, থাকবে।

ডিসি/এসআইকে/এসএমআর