মসজিদে নামাজের অনুমতি, তবে ১২ শর্তে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>> 
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করার ধারায় এবার মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ারও অনুমতি দিল সরকার।  বুধবার (৬ মে) ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৭ মে) জোহরের ওয়াক্ত থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও দুরত্ব রক্ষার নিয়মসহ বেশ কিছু শর্ত মেনে সুস্থ ব্যক্তিরা দেশের মসজিদগুলোতে জামাতে নামাজ পড়তে পারবেন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ৬ এপ্রিল দেশের সব মসজিদে বাইরে থেকে মুসল্লি ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।  বলা হয়, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ মসজিদের খাদেমরা মিলে পাঁচজনের জামাত হবে।  আর জুমার নামাজে থাকতে পারবেন মসজিদসংশ্লিষ্ট ১০ জন।  এরপর ২৩ এপ্রিল আরেক আদেশে রমজানে মসজিদে তারাবির জামাতে সর্বোচ্চ ১২ জনের অংশগ্রহণের সীমা ঠিক করে দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।  সেখানেও বাইরের কারও যোগ দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে।
কড়াকড়ি শুরুর এক মাসের মাথায় তা শিথিলের কথা জানিয়ে গতকাল বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাগণও পবিত্র রমজানুল মোবারক মাসের গুরুত্ব বিবেচনা করে মসজিদে নামাজ আদায়ের শর্ত শিথিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর জোর দাবি জানিয়েছেন।  সম্প্রতি সরকার সার্বিক বিবেচনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ ঘোষণার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। তৎপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাবলি অনুসরণপূর্বক ৭ মে, ২০২০ তারিখ জোহরের ওয়াক্ত থেকে সুস্থ্ মুসল্লিদের মসজিদে জামায়াতে নামাজ আদায়ের সুযোগ প্রদানের পরামর্শ প্রদান করেছে’।
ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামার সঙ্গে পরামর্শ করে’ মসজিদে জামাতে নামাজের জন্য ১২ দফা শর্ত রাখা হয়েছে।  শর্তগুলো হচ্ছে-
১. মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না।  পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।  বাইরে থেকে যারা নামাজে যাবেন, তাদের নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে যেতে হবে।
২. মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে।  মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে যেতে হবে।
৩. প্রত্যেককে নিজের বাসা থেকে ওযু করে সুন্নত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে যাবেন এবং ওযু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪. কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব অর্থাৎ তিন ফুট দূরত্ব রেখে দাঁড়াতে হবে।
৫. এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
৬. শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।
৭. মসজিদের ওযুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।  মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ বা টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৮. সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
৯. মসজিদে ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা যাবে না।
১০. এসব শর্ত পালন সাপেক্ষে প্রত্যেক মসজিদে সর্বোচ্চ পাঁচজন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ইতেকাফ এর জন্য অবস্থান করতে পারবেন।
১১. করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নামাজ শেষে দোয়া করার জন্য খতিব ও ইমামদের অনুরোধ করা হচ্ছে।
১২. খতিব, ইমাম ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।
এসব নির্দেশনা লংঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে সতর্ক করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ