দু’দিনেই চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত ২৪৪, নগরেই ১৯১ : পুরোপুরি বিচ্ছিন্নের দাবি

নগর প্রদিবেদক >>>
গত দু’দিনে (২৪ ও ২৫ মে) চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত নতুন করে ২৪৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।  এরমধ্যে ১৯১ জনই চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার।  এটিকে করোনার চরম হটস্পট হিসেবে বিবেচনায় এনে চট্টগ্রামকে সারাদেশ থেকে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  দ্রুত চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে জরুরি অবস্থা কিংবা কারফিউ জারি না করলে চট্টগ্রাম মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।  শুধু আক্রান্তের দিকে নয়, প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।  সেই সাথে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করছেন অসংখ্য মানুষ যারা করোনা পরীক্ষার আওতায় আসেননি।  ইতোমধ্যে একাধিক শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ ও তাদের পরিবারে করোনার হানার বিষয়টিও বেশ আলোচিত হয়েছে।  এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামের মানুষকে বাঁচাতে, এই অঞ্চলকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া থেকে মুক্ত করতে এখনি কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামে ২৪ ও ২৫ মে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা পরিস্থিতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২৪ মে (ঈদের আগের দিন) জেলায় মোট ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন।  বিআইটিআইডিতে ২০১টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ (নগরের ১৬, উপজেলার ১৯), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জন পজেটিভ (নগরে ২৮, উপজেলায় ২) রোগী চিহ্নিত হন।  এরমধ্যে উপজেলাগুলোর মধ্যে এদিন বাঁশখালী উপজেলার ৪, পটিয়া উপজেলার ৩, বোয়ালখালী উপজেলার ২, হাটহাজারী উপজেলার ৪, সীতাকুণ্ড উপজেলার ৭ ও মিরসরাই উপজেলার ১ করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়।  অন্যদিকে এদিন চট্টগ্রাম মহানগরে মোট ৪৪ জন করোনা রোগীর মধ্যে চকবাজারে ১, খুলশীতে ১, সুগন্ধায় ১, বাকলিয়ায় ১, মোহরায় ২, লালখান বাজারের ১, কোতোয়ালীর ৩, বন্দরের ২, বায়েজিদের ১, পাহাড়তলীতে ৭, এনায়েত বাজারের ১, পার্ক ভিউ হাসপাতালে ১, চান্দগাঁওয়ে ১, ডবলমুরিং এলাকায় ৩, আকবরশাহ’য় ৪, ইপিজেড এলাকায় ১, দামপাড়ায় ৩, মাদারবাড়িতে ১, পাঁচলাইশে ১, হালিশহরে ৩, পতেঙ্গায় ১, সদরঘাটে ১, কদমতলীতে ১ এবং ডবলমুরিং এর ঈদগাঁ এলাকায় ২ জন শনাক্ত হন।
এরপর পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের দিন (২৫ মে) জেলার মোট ৩৮০টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ আক্রান্ত ১৭৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়।  ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে এদিন ৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হলেও একটিও করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়নি।  তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এদিন ৩২৫টি নমুনা পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৭৯ জনের মধ্যে কোভিড- ১৯ পজেটিভ পাওয়া যায় যা চট্টগ্রামবাসীকে রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত করেছে।  এদিন আক্রান্ত ১৭৯ জনের মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীতেই রয়েছেন ১৬৩ জন যা এ যাবত সর্বোচ্চ।  এছাড়াও জেলার সাতকানিয়া উপজেলায় ১, আনোয়ারা উপজেলায় ২, চন্দনাইশ উপজেলায় ২, পটিয়া উপজেলায় ৫, হাটহাজারী উপজেলায় ২ জনসহ মোট ১২ জন আক্রান্ত হন।
ঈদের দিন চট্টগ্রামে যেমন আক্রান্তে রেকর্ড ছাড়িয়েছে, তেমনি সারাদেশেও রেকর্ড ছাড়িয়েছে।  এদিন সারাদেশে ১৯৭৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয় যা দীর্ঘ ৬৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।  গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে করোনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত দুইমাসে যে পরিমাণ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন,  গত এক সপ্তাহে এর দ্বিগুন আক্রান্ত হয়েছেন।  এ থেকে বোঝা যায়, চট্টগ্রাম ইতোমধ্যে করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে।  সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি না হলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।  অন্যদিকে সচেতন মহলের দাবি- সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারায় এবং চট্টগ্রামকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে রাখায় এই অঞ্চল করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে।  এখন দ্রুততার সাথে চট্টগ্রামে জরুরি অবস্থা কিংবা লকডাউন করে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন না করলে জেলায় করোনার থাবা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।  যারা করোনা মোকাবেলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে সেই চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক সমাজ কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।  মূল সেবাপ্রদানকারী জনগোষ্ঠী যদি এভাবে আক্রান্ত হতে থাকেন তাহলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে চট্টগ্রামে বিপর্যয় নেমে আসবে।  এমনিতেই জেলায় স্বাস্থ্যখাতে প্রচুর ঘাটতি রয়েছে।  ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র এই অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পর্যন্ত প্রেরণ করেছেন।  জেলা সিভিল সার্জনও করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বেশকিছু চাহিদাপত্র দিয়েছেন যার অধিকাংশই এখনো দেয়া হয়নি।

ডিসি/এসআইকে/আইএস