চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত ৪ হাজার ছাড়ালো, মৃত্যু শতাধিক

ইসলাম শফিক, প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার কষাঘাতে যেন চট্টগ্রাম ন্যূয়ে পড়েছে।  প্রতিদিনই জেলায় আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।  অন্যদিকে এর উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন মরছেন অনেক মানুষ।  স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ৬ জুন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির সংখ্যা ৯৭ জন।  ৭ জুনের তথ্য যুক্ত হলে এই সংখ্যা শত পার করবে।  তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজারের বেশি।  যদিও সরকারি হিসেবে তা নথিভুক্ত হয়নি।
অন্যদিকে, সর্বশেষ ৭ জুন (রবিবার) পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে ৭ জুন (রবিবার) নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ১০৬ জন।  এরমধ্যে নগরের আছেন ৫৫ জন, উপজেলার রয়েছেন ৫১ জন।  সেই হিসেবে জেলায় মোট কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮ জনে।  এরমধ্যে নগরের রয়েছেন ২ হাজার ৯২৯ জন।  আর উপজেলায় ১ হাজার ১৩৯ জন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ৭ জুন (রবিবার) পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৮ জন।  এরমধ্যে নগরের রয়েছেন সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯২৯ জন।  উপজেলাগুলোতে ১ হাজার ১৩৯ জন।  এরমধ্যে পটিয়া উপজেলায় ১৮৬, হাটহাজারী উপজেলায় ১৬১, সীতাকু- উপজেলায় ১৩৮, বোয়ালখালী উপজেলায় ১১৬, চন্দনাইশ উপজেলায় ১১০, বাঁশখালী উপজেলায় ৭২, লোহাগাড়া উপজেলায় ৬২, রাউজান উপজেলায় ৬৩, সাতকানিয়া উপজেলায় ৬৪, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৬১, আনোয়ারা উপজেলায় ৪৬, সন্দ্বীপ উপজেলায় ২৫, ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৮, মিরসরাই উপজেলায় ১৭ জন আছেন।
সিভিল সার্জন বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ২৭% রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা (নারী ২২১, পুরুষ ৮৪০), ২৪% রয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা (নারী ২৬৩, পুরুষ ৬৮৬)। এছাড়াও ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৮% (নারী ১৬৩, পুরুষ ৫৩৩), ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৪% (নারী ১৪০, পুরুষ ৪১৬), ষাটোর্ধ্ব বয়সী আক্রান্ত ব্যক্তি ৮% (নারী ৬৯, পুরুষ ২৬৮) এবং শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা ২% (নারী ৩৪, পুরুষ ৬৫)।
তিনি বলেন, গত ৬ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৭৪ জন।  আইসোলেশনে থাকা রোগীর সংখ্যা ২৩৬ জন।  আর মৃত্যুবরণকারী রোগীর সংখ্যা ৯৭ জন।  যে ৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে নগরের ৭৮ জনের মধ্যে রয়েছেন পাহাড়তলীতে সর্বোচ্চ ৯ জন, হালিশহরে ৮ জন, কোতোয়ালীতে ৬ জন, আকবরশাহ’য় ৫ জন, খুলশীতে ৫ জন, দামপাড়ায় ৪ জন, পাঁচলাইশে ৩ জন, ডবলমরিংয়ে ৩ জন, একই থানাধীন ঈদগাঁহ এলাকার ৩ জন।  এছাড়াও নগরের চকবাজার এলাকার ২ জন, বন্দর এলাকার ২, বাকলিয়া এলাকার ২, বায়েজিদে ২, মোহরায় ২, মাদারবাড়িতে ২, আগ্রাবাদে ২, সদরঘাটে ২ জন। নগরের পতেঙ্গা, সুগন্ধা, লালখান বাজার, পার্কভিউ হাসপাতাল, কদমতলী, চান্দগাঁও, ইপিজেড, এনায়েত বাজার, বাকলিয়ার বউ বাজার, মোগলটুলী, মোহাম্মদপুর, মেরিন সিটি কলেজ, লেভেল পার্ক, সিএমসিএইচ, সিজিএইচ ও বাকলিয়ার রাহাত্তারপুল এলাকার ১ জন করে মৃত্যুবরণ করেছেন।
অন্যদিকে উপজেলাগুলোতে যে ১৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দেয়া হয়েছে তার মধ্যে লোহাগাড়া, পটিয়া ও সীতাকুণ্ডের ৩ জন করে মোট ৯ জন রয়েছেন।  বাকী ১০ জনের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ২ জন, হাটহাজারী উপজেলার ২, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও সন্দ্বীপ উপজেলার ১ জন করে রয়েছেন।
মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৬১ বছরে বেশি বয়সী রয়েছেন সর্বোচ্চ ৩৭ জন (পুরুষ ৩২, নারী ৫), ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৮ জন (পুরুষ ২০, নারী ৮, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৬ জন (পুরুষ ১৩, নারী ৩), ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৯ জন (পুরুষ ৫, নারী ৪), ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ জন (পুরুষ ২, নারী ১), ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩ জন (নারী ৩) এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১ জন (পুরুষ) রয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রামের করোনায় ঝুঁক্তিযুক্ত এলাকা চিহ্নিত করে ঢাকায় পাঠিয়েছে। আরা লাল, হলুদ ও সবুজ- এই তিনটি চিহ্নযুক্ত করে রেড, ইয়েলো ও গ্রীন এলাকা চিহ্নিত করেছি।  আমরা বলেছি যেসব এলাকা রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো দ্রুততার সাথে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিতে।  ঢাকা থেকে নির্দেশনা পেলেই আমরা সংক্রমিত এলাকাকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে এনে সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবো।

ডিসি/এসআইকে/আইএস