মো. আকতার হোসেন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি >>>
আট লাখের মানুষের জেলা পার্বত্য খাগড়াছড়িতে নেই কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ। আইসিইউ সংকটে করোনা আক্রান্ত কোনো মুমূর্ষ রোগীকে জীবন বাঁচাতে পাড়ি দিতে ১২০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রামে। সেখানেও সংকট থাকায় আইসিইউ মেলার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আইসিইউ এর অভাবে মারা যাচ্ছে রোগীরা। করোনা মোকাবেলায় জেলা পর্যায়ে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন জেলাবাসী। জেলা সিভিল সার্জন বলছে- আইসিইউ স্থাপন এখন সময়ের দাবি। একই অবস্থা বাকী দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি-বান্দরবানেও।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় দিন দিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে। তবে করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষ রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য কোনো আইসিইউ সুবিধাই নেই। এতে করোনা আক্রান্তদের মাঝে উদ্বেগ বেড়েছে। এছাড়াও অন্যান্য যেসব রোগীর আইসিইউ সেবা প্রয়োজন প্রতিদিনই তারা সেই সেবা না পেয়ে ছুঁটছেন দূর-দূরান্তে। সামর্থ না থাকলেও সংসারের জিনিসপত্র বেঁচে হলেও প্রিয়জনকে বাঁচাতে চাইছেন। অন্যদিকে আইসিইউ’র সংকটের কারণে করোনায় আক্রান্ত রোগীরাও মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। করোনা আতংকে থাকা মানুষের মাঝে আইসিইউ সংকট স্বাস্থ্যখাতে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থার অবনতি হলে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে রেফার করা হয়। এতে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটারের পাহাড়ি পথ। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পর্যন্ত যাওয়ার আগেই রোগীর প্রাণ হারানোর আশঙ্কা থেকে যায়। তবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পাওয়ারও কোনো নিশ্চিয়তা না থাকায় মহাশঙ্কায় পার্বত্য জেলার মানুষগুলো। তাই জেলায় দ্রুততম সময়ে আইসিইউ সেবা সংযোজনের দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়িবাসীসহ বাকী দুই পার্বত্যজেলার বাসিন্দারা।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার জীবন চৌধুরী দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ‘এখানে এতো মানুষের বসবাস। দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যওা বাড়ছে, রয়েছে অন্যান্য রোগীরাও। কিন্তু এখানে ন্যূনতম সুবিধা নেই। আইসিইউ না থাকায় রোগীর প্রাণহাণির শঙ্কা মাথায় নিয়ে দূর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে আসাও অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। সেখানে জেলা সদর থেকে আরো ১২০ কিলোমিটারের ঝক্কি-ঝামেলা বিষিয়ে তোলে আক্রান্ত রোগীর পরিবারকে।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী জনপ্রিয় চাকমা দৈনিক চট্টগ্রামকে বলেন, এখানে দূর্গম এলাকার মানুষ অনেক পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে আসেন। এসব প্রান্তিক মানুষের পক্ষে চট্টগ্রাম বা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব না। তাই জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করতে হবে।
জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হলেও বরাবরই অবহেলিত স্বাস্থ্য খাত। এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে সচেতন নাগরিকরা। জেলা রেড ক্রিসেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট জসীম উদ্দিন মজুমদার দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ‘জেলায় আইসিইউ সুবিধা না থাকায় স্থানীয় মুমূর্ষ রোগীদের প্রাণহানির ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। অন্যদের মধ্যে কাজ করে ভয়-আতঙ্ক। রোগীদের পরিবারের সদস্যরা থাকেন শঙ্কায়, আছে আর্থিক সংকটও। চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব না, কারণ সেখানেও এই সুবিধা থাকলেও সংকট রয়েছে। আর দূরে যেতে যেতে পথেই রোগী মারা যাওয়ার উদাহারণ রয়েছে অনেক। পার্বত্য খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে যেতে সময় লাগে ৪-৫ ঘন্টা। এই সময়টি রোগী ও তার পরিবারের কাছে বিভীষিকাময় হয়ে উঠে’।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পূর্ণ বিকাশ চাকমা দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ‘আইসিইউ না থাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাতে পারিনি। কিছুদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আইসিইউ সুবিধা দিতে না পারায় পরদিন তিনি মারা গেছেন। এসময়ে মুমূর্ষ রোগীদের অন্য জেলায় রেফার করেও কোনো লাভ হয় না। দূরত্বের কারণে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থেকেই যায়। এখান থেকে চট্টগ্রামে রেফার করা হলেও এই লম্বা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুর অনেক ঘটনা রয়েছে। তাই জেলা হাসপাতালে জরুরিভিত্তিতে আইসিইউ স্থাপন করা গেলে রোগীদের সেবা দেয়া যেত।
জেলায় আইসিইউ স্থাপন জরুরি বলে মনে করেন জেলা সিভিল সার্জন নুপুর কান্তি দাশও। তিনি দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, ‘জেলায় যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষ অবস্থা হয়, তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইসিইউ, ভেন্টিলেটর না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। করোনার প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে সেটি মোকাবেলায় জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি’।
ডিসি/এসআইকে/এমএএইচ