জরায়ু-মুখ ক্যান্সার : আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ দ্বিতীয়, সচেতনতার বিকল্প নেই

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে জরায়ু-মুখের ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়।  দেশে ২০১৮ সালে নতুনভাবে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮ হাজার ৬৮ জন এবং একই বছরে ৫ হাজার ২১৪ জন নারী মারা গিয়েছিলেন।  দেশে নারীদের যত ক্যান্সার হয় তার ১২ শতাংশ হলো জরায়ু-মুখ ক্যান্সার।  ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী শীর্ষে রয়েছে।  বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুনভাবে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ১২ হাজার ৭৬৪ জন এবং যাদের মধ্যে মারা যায় ৬ হাজার ৮৪৬ জন।  দেশে নারীদের যত ক্যান্সার হয় তারমধ্যে ১৯ শতাংশ হলো স্তন ক্যান্সার।  জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকা অনেকাংশেই নির্ভর করে শনাক্তের সময় ক্যান্সারটি কোন স্টেজে আছে তার উপর।  প্রাইমারি স্টেজে ক্যান্সারের চিকিৎসা খুব কার্যকর, এতে চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভালো হয় এবং এটা কম ব্যয়বহুল।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ-ব্লকের সম্মেলন কক্ষে ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং কর্মসূচি প্রকল্পের উদ্যোগে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সপ্তাহ (১৯-২৫শে জানুয়ারি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।
প্রকল্প সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৮,২০১৯ ও ২০২০ সালে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার নির্ণয়ে মোট ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৬ জন নারীর ভায়া টেস্ট করা হয় এবং যাদের মধ্যে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৩ জন পজেটিভ পাওয়া যায় এবং গত ৩ বছরে স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬১০ জন নারীর সিবিই টেস্ট করা হয় এবং যাদের মধ্যে ২৬ হাজার ৫৭ জন নারীর পজেটিভ পাওয়া যায়।  ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং কর্মসূচি প্রকল্পের সূত্রে জানা যায়, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার বিশ্ব জুড়ে মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে চতুর্থতম এবং ক্যান্সারজনিত কারণে মৃত্যুর চতুর্থতম শীর্ষ কারণ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর।
সভায় বক্তারা স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে জনসেচেতনা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সমন্বিত কার্যক্রমের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন।  তারা স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে আগেভাগেই রোগ দু’টি চিহ্নিত করা, এ বিষয়ে সেবার কার্যক্রম কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা, সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার-প্রচারণামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা, স্ক্রীনিং কার্যক্রম আরো বিস্তৃত করা, প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন।
সচিব মো. আলী নূর বলেন, বাংলাদেশে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।  জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ বড় ধরণের চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলেও অসাধ্য নয়।  সমন্বিতভাবে এই রোগ দু’টি মোকাবেলা করতে হবে।  কিশোরীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার আগেভাগে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক রোগীই দীর্ঘায়ু লাভ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন।  এই রোগ দু’টি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সার্জনদেরসহ সকলকে অর্ন্তভুক্ত করে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।  এটা নিশ্চিত করা গেলে মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস পাবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসাইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিপ্তরেরর মহাপরিচালক ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব সিদ্দিকা আক্তার, পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু উপস্থিত ছিলেন।  সভার উদ্দেশ্য ও বাংলাদেশে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং এবং প্রতিরোধ কার্যক্রম বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ