আসছে অর্থনৈতিক মন্দা : মোকাবেলায় তৈরি হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।- ফাইল ছবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে আসন্ন ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদনসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংকটের সময় প্রয়োজন হলে যাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্য দেশকেও সহায়তা করা যায়, তার জন্য কোনো জমি বা জলাশয় যাতে অনাবাদী না থাকে তা নিশ্চিত করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
মহামারী প্রতিরোধে মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে গিয়ে এই নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এখন যেটা হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এরপরে কিন্তু আরেকটা ধাক্কা আমাদের আসবে। সেটা হচ্ছে, সারা বিশ্ব কিন্তু স্থবির হয়ে আছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে বিরাট আকারে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। সেই মন্দা মোকাবেলার চিন্তা-ভাবনা এখন থেকেই আমাদের করতে হবে, পরিকল্পনা নিতে হবে’।
দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকলেও খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারো এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে, কোনো জলাশয় যেন পড়ে না থাকে। এটা অব্যাহত রাখতে পারলে দেশের চাহিদা তো আমরা মেটাতে পারবই, অন্য দেশকেও প্রয়োজন হলে আমরা সাহায্য করতে পারব। আল্লাহর রহমতে সেই ক্ষমতা আমরা অর্জন করতে পারি, সেই সক্ষমতা আমাদের আছে’।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের এখন থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন বলেন, ‘যার যেখানে এতোটুকু জমি আছে- ঘরের কোনে হলেও.. যা পারেন, যেটা পারেন… একটা কিছু ফসল ফলান; তরিতরকারি করেন, ফলমূল করেন বা হাঁস- মুরগি বা খামার করেন। অর্থাৎ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা উৎপাদন দরকার আমাদের এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে’।
এসময় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাপক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফসল ফলানোর জন্য যা যা উপকরণ দরকার হয়, অনুরোধ করব, সেই উপকরণগুলো যাতে সরবরাহ হয়। সেটা যেন যথাযথভাবে মানুষের কাছে পৌঁছায়। সেই উদ্যোগটা নিলে আমি মনে করি, আমরা বিশ্বমন্দা কাটিয়ে উঠতে পারব- এটা আমাদের খুব একটা ক্ষতি করতে পারবে না’।
                                                 কেউ যেন অভুক্ত না থাকে
সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটিতে কাজ হারানো নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষের ঘরে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসকসহ সকলকে নিয়মিত সামাজিক নিরাপত্তামূলক কাজগুলো যথাযথভাবে পালনের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু তার বাইরে এই যে শ্রেণিটা আছে যারা হয়তো দিনমজুরি করে খেত বা দিন আনি দিন খাই। ভ্যানচালক, রিকশাচালক বা স্কুটারচালক অথবা চায়ের দোকানদার বা ছোটখাটো কাজ যারা করে দিনশেষে টাকা নিয়ে বাজার করে খেত। এই শ্রেণির লোকেরা কিন্তু কোনো কাজ পাচ্ছে না বলে তারা কিন্তু ভুক্তভোগী। সে ক্ষেত্রে আমি বলব তাদের কাছে আমাদের সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে, খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে। যেন তাদের পরিবার নিয়ে তারা অভুক্ত না থাকে। সেখানে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাদেরকেও জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সেটাও আমাদের করতে হবে’।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে কাউকে খাদ্য সহায়তা করতে গিয়ে লোকসমাগম যাতে না হয় তা নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমজীবী মানুষের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকে যেন এই সহযোগিতাটা পায়। সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। এই দায়িত্ব সকলকেই পালন করতে হবে। এই দায়িত্ব যারা বিত্তশালী আছেন তাদেরকে যেমন পালন করতে হবে, আমাদের প্রশাসনে যারা তাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে.. আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা তাদেরও দায়িত্ব এটা, সকলেরই দায়িত্ব।
দরিদ্রদের খাদ্যসহ সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রকম অনিয়ম-দুর্নীতি হলে ছাড় দেওয়া হবে না হুঁশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কেউ অর্থশালী, সম্পদশালী হয়ে যাবে সেটা কিন্তু আমরা কখনো বরদাস্ত করব না’।
এই দুর্যোগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশনা দেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যটা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সাধারণ মানুষের আওতার মধ্যে থাকে। সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে অযথা দাম বাড়িয়ে মুনাফা নেওয়া এটা আসলে অমানবিক হবে’।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কর্মকর্তাদের সচেতন থাকার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, এই দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনো রকম অপকর্ম না করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
                                                    সাহস রাখার পরামর্শ
বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশবাসীকে ভীত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে কোনো দুর্যোগ আসলে আমি মনে করি এটা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। এবং সে জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। এখানে ভীত হওয়ার কিছু নেই। মনের জোর থাকতে হবে। এই রকম অনেক দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করেছি। ইনশাল্লাহ এটাও আমরা মোকাবেলা করে যাচ্ছি এবং আগামিতেও যাব’।
করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য শুরু থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সমস্ত নির্দেশনা দিয়েছে সেই নির্দেশনা যখন আমরা পেয়েছি তার অনেক আগে থেকেই আমরা কিন্তু তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। আমরা কিন্তু মানুষকে সুরক্ষিত রাখার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে আজকে এত ব্যাপক হারে এখনো এর প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারেনি। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে না হয় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে’।
করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘লুকাতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ করবেন না, পরিবারের সর্বনাশ করবেন না’।
                                                    গুজবে কান দেবেন না
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যারা গুজব ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়েও ফেসবুক বা বিভিন্ন অ্যাপসে নানা ধরনের গুজব অনবরত ছড়ানো হয়ে থাকে। নানা ধরনের কথা অনেকে বলে থাকেন। আবার দেখলাম দেশের বাইরে থেকেও কেউ কেউ বলে। জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি এইটুকু বলব, গুজব রটানো থেকে সবাই বিরত থাকুন। গুজব শুনবেন না, গুজবে কান দেবেন, গুজব নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না- এটাই আমার অনুরোধ সবার কাছে’।

ডিসি/এসআইকে/এসজেপি