করোনা : চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত ২৭, আকবরশাহ-পাহাড়তলীতেই ১০

ইসলাম শফিক, প্রধান প্রতিবেদক >>>
গত ২৪ ঘন্টায় (মঙ্গলবার পর্যন্ত) চট্টগ্রামে আরো ১১ জন করোনা ভাইরাস (কোভিড- ১৯) আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি থেকে মোট ১১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মোট ১২ জনের কোভিড- ১৯ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। এই ১২ জনের একজন চট্টগ্রামের বাইরে নোয়াখালী জেলার।
চট্টগ্রামে নতুন করে আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে আকবরশাহ-পাহাড়তলী থানার আওতাধীন এলাকার ৪ জন, সাতকানিয়া উপজেলার ৫ জন, চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশের ১ জন এবং বোয়ালখালী উপজেলার ১ জন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৩ এপ্রিল থেকে মূলত চট্টগ্রামে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ হতে থাকে। এদিন নগরের দামপাড়ার ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রথম কোভিড- ১৯ আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হন। এরপর গত ৫ এপ্রিল দামপাড়ার ওই একই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলের মধ্যে কোভিড- ১৯ সনাক্ত হয়। এরপর ৮ এপ্রিল মোট ৩ জনের মধ্যে এই ভাইরাস সনাক্ত হয়। তাদের একজন পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকার ১ জন, দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের শাপলা আবাসিকের ১ জন এবং সীতাকু- উপজেলার ১ জন। মূলত এদিনই প্রথম পাহাড়তলী থানা এলাকায় এই কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। মূলত এর পর থেকেই এই অঞ্চলে করোনায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টি প্রথম সামনে আসে। এবং কাকতালীয়ভাবে প্রতিদিনই এখানে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত ১০ এপ্রিল নতুন করে ২ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দেন জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি। তারমধ্যে আকবরশাহ থানাধীন ফিরোজশাহস্থ গোলপাহাড়ের ১ জন এবং অন্যজন নগরের ফিরিঙ্গি বাজার এলাকার। ১১ এপ্রিল আক্রান্ত হন ২ জন। তাদের মধ্যে একজন পাহাড়তলী থানাধীন দুলালাবাদের ১ জন এবং সাতকানিয়া উপজেলার ১ জন। ১২ এপ্রিল মোট আক্রান্ত হন ৫ জন। তাদের মধ্যে দামপাড়া ট্রাফিক পুলিশ লাইন্সের এক ট্রাফিক সদস্য, পটিয়া উপজেলার ৬ বছরের ১ শিশু, সীতাকু- উপজেলায় ( ফৌজদারহাটে) ১ জন ও সাতকানিয়া উপজেলার ২ জন। ১৩ এপ্রিল নতুন করে যে ২ জন আক্রান্ত হন তারা দু’জনই আকবরশাহ ও পাহাড়তলী থানা এলাকার। একজন উত্তর কাট্টলী এলাকার ঈশান মহাজন সড়ক এবং অন্যজন সরাইপাড়া লোহারপুল এলাকার। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) মোট ১১ জন আক্রান্ত হয় পুরো চট্টগ্রাম জেলায়। তারমধ্যে ৪ জনই পাহাড়তলী-আকবরশাহ থানা এলাকার সাগরিকা ও আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বাকী ৭ আক্রান্তের ১ জন বোয়ালখালী উপজেলার (ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন), পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ জন এবং সাতকানিয়া উপজেলার ৫ জন।
উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আক্রান্তদের ২৭ জনের মোট ১০ জনই পাহাড়তলী-আকবরশাহ এলাকার। এই ১০ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে সরাইপাড়ার কাজীরদিঘী এলাকার এক নারী মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্যদিকে সাতকানিয়া উপজেলার ৮ জন। সে দিক থেকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের যে ভয়াবহ বিস্তৃতি তা শুধুমাত্র পাহাড়তলী ও আকবরশাহ থানা কেন্দ্রিক বেশি। ফলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক স্বীকার করতে বাধ্য হন- পাহাড়তলী-আকবরশাহ এলাকাটি নারায়ণগঞ্জের মতোই করোনা ভাইরাস উপদ্রুত এলাকা হিসেবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের থার্ড স্টেজে রয়েছে। যে কোনো সময় এই অঞ্চলটিকে ক্লাস্টার জোন হিসেবে ঘোষণা দিতে হতে পারে। অন্যদিকে জেলা সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে- এই অঞ্চলটিতে করোনা ভাইরাস মারাত্মকভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে। এর ভয়াবহতা আর কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে।
সামাজিকভাবে যে এই ভাইরাসটি মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তা স্বীকার করে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইনুর রহমান দৈনিক চট্টগ্রামকে জানান, সামাজিকভাবে এই ভাইরাস এই অঞ্চলে যে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা ইতোমধ্যে যাদের সনাক্ত করেছি তাদের চলাচলের ইতিহাস বিশ্লেষণে এটি প্রতিয়মান যে, আক্রান্তদের সবাই বাজার বা মানুষের জটলা থেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সে জন্য সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি এই অঞ্চলকে পুরোপুরি নারায়ণগঞ্জ জেলার মতো বিচ্ছিন্ন করার আলোচনা চলছে। দ্রুতই এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ডিসি/এসআইকে/আইএস