সাজাপ্রাপ্তরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশে যায়, খালেদা নয় কেন, প্রশ্ন ফখরুলের

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘তাদের সলিমুদ্দিন, কালিমুদ্দিন, সাজাপ্রাপ্তরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে।  অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া বেগম খালেদা জিয়াকে তারা বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।  এর কারণ, সরকার তাকে ভয় পায়।  তিনি যদি রাস্তায় নামেন, তাহলে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মানুষের ঢল নেমে আসবে’।
রবিবার (১২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন।
সরকারসংশ্লিষ্ট হলে সাজা নিয়েও বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কেন এই সুযোগ পাবেন না, সে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে সরকারকে এর দায় নিতে হবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রীকে ২০২০ সালের মার্চে যখন সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়, তখনই শর্ত দেয়া হয় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।  তবে ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এবং বছরের শেষে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তার দল এবং স্বজনরা।  তবে সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
খালেদা জিয়া তৃতীয় দফায় যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি জীবন-সংশয়ে আছেন।  চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তার লিভার সিরোসিস হয়েছে এবং দেশে এর চিকিৎসা নেই।  বিদেশে নিয়ে যেতে দেরি হলে কিছু হয়ে যেতে পারে।
তবে সরকার রাজি না হওয়ার পর খালেদা জিয়া প্রায় তিন মাস পর বাসায় ফেরেন এবং শনিবার প্রথম প্রহরে আবার হাসপাতালে ভর্তি হন।  এবার জানানো হয়েছে, তার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং তার এনজিওগ্রাম বা হার্টে রিং পরানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের সলিমুদ্দিন, কালিমুদ্দিন, সাজাপ্রাপ্তরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে।  অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া বেগম খালেদা জিয়াকে তারা বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।  এর কারণ, সরকার তাকে ভয় পায়।  তিনি যদি রাস্তায় নামেন, তাহলে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মানুষের ঢল নেমে আসবে।  বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে।  যেটা আমাদের এখানে নেই।  যেটা বিদেশে আছে।  বারবার চিকিৎসকরা বলছেন।  আমাদের খুব সোজা কথা, আল্লাহ না করুন বেগম খালেদা জিয়ার যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সরকারকেই দায় নিতে হবে।  এ দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।  টেনেহিঁচড়ে নামাবে’।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কথা স্পষ্ট।  তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠাতে হবে।  অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।  নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।  এর বাইরে দেশের মানুষ কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত না।  বেগম খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন, সে কারণে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তার অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে’।
দাবি মেনে না নিলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও সতর্ক করে দেন ফখরুল। বলেন, ‘এখনও সময় আছে, দাবি মেনে নিন, তাহলে রক্ষা পেতে পারেন।  এরপর আর পালাবার পথ পাবেন না।  সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।  যে দুর্বার আন্দোলন হবে তাতে আপনাদের রক্ষা হবে না।  আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং জনগণের কল্যাণ একটি সরকার গঠন করব’।
পাচার করে এখন ফেরত আনা
ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তো কোনো ব্যবস্থা নেয়ইনি, বরং কেমনে বাড়ানো যায় সেটা করেছেন।  শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়েনি।  অথচ করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের দশা ফুটে উঠেছে’।  পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘এতদিন টাকা পাচার করেছেন।  কানাডা, অস্ট্র্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে, বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছেন এখন সেগুলো জায়েজ করতে কর দিয়ে টাকা ফেরত আনার কথা বলেছেন’।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু সভায় যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ