ইসিকে ‘সরকার নিয়ন্ত্রিত’ আখ্যা দিয়ে সরে গেলেন জাপার ৩ প্রার্থী

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বরিশালে দুটি আসনের ভোটের লড়াই থেকে সরে গেলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) ৩ প্রার্থী। ‘আসন ভাগাভাগির নির্বাচন আখ্যা দিয়ে জাপার প্রার্থীরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি দল ও সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ২০১৮ সালের মতো আরেকটি একপক্ষীয় নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বর্তমান ইসি’।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়া প্রার্থীরা হলেন, গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সিটির একাংশ) ও গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সদর একাংশ) আসন থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন। তিনি দলের গাজীপুর মহানগরের সভাপতিও। এছাড়াও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের ইকবাল হোসেন তাপস এবং বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের খলিলুর রহমান।
নিয়াজ উদ্দিন আজ রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তার দুটি নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় পোস্টার ও ব্যানারও সাঁটিয়েছিলেন। কিন্তু প্রচার–প্রচারণা শুরুর ১৩তম দিনে নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের একতরফা নির্বাচন, সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছি। আমার সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও কোনো আলোচনা হয়নি। মূলত আমি আর পারছি না, যার কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি’।
এদিকে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের ইকবাল হোসেন তাপস এবং বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের খলিলুর রহমান রবিবার বরিশাল নগরীর একটি কমিউনিটি হলে জাপার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইকবাল হোসেন তাপস। দল নির্বাচনে থাকার পরও দুজনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তাপস বলেন, এটি দুই প্রার্থীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।
তাপস দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর আহŸায়ক কমিটির সদস্যসচিব। তিনি দুটি আসনে প্রার্থী হয়ে যে কোনো একটিতে জোটের সমর্থনপ্রত্যাশী ছিলেন। সমর্থন না পেয়ে প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি প্রচার-প্রচারণায় নামেননি। খলিলুর রহমান বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। মতবিনিময় সভায় তিনি উপস্থিত থেকে তাপসের বক্তব্যকে সমর্থন জানান।

গাজীপুর- ১ ও ৫ আসনে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া নিয়াজ উদ্দিন।

তাপস বলেন, ‘দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নির্বাচন চলছে। ১৪ দলের শরীক ৭ নেতাকে নৌকা প্রতীক দেওয়ায় ১৪ দল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জাপার তৃণমূল নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি আসন না পেলেও ৩০০ আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে। কিন্তু ২৬টি আসনে জাপার প্রার্থীদের মহাজোটের প্রার্থী বানানো হয়েছে। ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপাকে ভয় পেয়ে নৌকায় উঠিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কারা নির্বাচিত হবেন সে সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে। তাই তিনি (তাপস) নির্বাচনে লড়াইয়ে প্রয়োজন মনে করছেন না। নির্বাচনী এলাকার জাপা নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।
বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে থাকতাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দিয়ে নাটক করছে। সরকারি দলের নাটকের জন্য নির্বাচন থেকে সরে গেলাম। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তা বিশ্বাস করি না’।
তাপস নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় বরিশাল- ৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন- পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, স্বতন্ত্র সালাউদ্দিন রিপন (ঈগল), এনপিপির আব্দুল হান্নান সিকদার (আম) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আসাদুজ্জামান (ছড়ি)। অপরদিকে বরিশাল-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন- ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন (নৌকা), স্বতন্ত্র মনিরুল ইসলাম মনি (ঢেঁকি), একেএম ফাইয়াজুল হক (ঈগল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নকুল কুমার বিশ্বাস (গামছা), এনপিপির সাহেব আলী (আম) এবং তৃণমূল বিএনপির শাহজাহান সিরাজ।
অন্যদিকে গাজীপুর- ১ আসনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর- ৫ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নাজনীন চুমকি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এ বিষয়ে বরিশাল-৫ আসনে নৌকার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ‘তাঁর চেয়ারম্যান, মহাসচিব ভোট করছেন। অথচ হঠাৎ করে তাপস সাহেব কি খোয়াব দেখলেন যে, শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালেন। নির্বাচন প্রহসনের হবে না বরং তাপসের জামানত থাকবে না এই ভয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ