পাহাড়তলীতে ফেবারিট হিরণ, কাউন্সিলর হতে চান অনেকে

বাঁ থেকে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, মো. জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, কায়সার মালেক, মো. ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী ও মাহমুদুর রহমান।

উম্মে সালমা, নিজস্ব প্রতিবেদক >>>
৫ বর্গ মাইল আয়তনের এই ওয়ার্ডটির বেশিরভাগ জায়গা-ই বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতায়। এই ওয়ার্ডটিতে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্র, রেলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা যথাক্রমে বীর কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মৃতি যাদুঘর, রেলওয়ে যাদুঘরসহ নান্দনিক স্থাপনা। রয়েছে বিশ্বখ্যাত আই ইনফারমারি, লায়ন্স চক্ষু হসপিটাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, কিডনি হাসপাতাল, ভেটেরিনারি অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল, বিজিবি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, ইম্পেরিয়াল হসপিটাল, ইউএসটিসি হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ ভবনসহ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বিহারি ক্যাম্পসমূহ। পুরো ওয়ার্ডটিকে আরো আকর্ষণীয় করেছে বেশ কিছু পাহাড় ও টিলা।
কিন্তু, এই ওয়ার্ডের বড় কিছু সমস্যা হচ্ছে- এখানে স্থানীয়দের চেয়ে নানান স্থানের মানুষের আধিক্যতা। এছাড়াও দিনে দিনে পাহাড়ঘেরা এই ওয়ার্ডটি যেন ন্যাড়া হতে চলেছে ভূমিদস্যুতা, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক আজ্ঞাবহতায় দখল ও কর্তনে বেশ সক্রিয় নানান মহলের প্রভাবশালী চৌর্যবৃত্তির কারণে। রয়েছে সুপেয় পানির হাহাকার। এতোকিছুর পরেও এই ওয়ার্ডটি নানান কারণে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবার। ইতোমধ্যে এই ওয়ার্ডে চট্টগ্রামের সবচাইতে বড় ও বৃহত পরিসরের স্মৃতিসৌধ, মুক্তমঞ্চ, বিনোদনকেন্দ্র সম্বলিত শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ প্রায় শেষ করেছে সিটি কর্পোরেশন। বড় করা হচ্ছে ছোট ও সরু সড়কগুলো। তৈরি হচ্ছে নতুন নালা, সম্প্রসারণ করা হচ্ছে হারিয়ে যেতে বসা ছোট খাল, ছড়া/উপছড়াগুলো। উচ্ছেদ করা হয়েছে অনেক অবৈধ স্থাপনা ও বসতি।
কিন্তু রাজনৈতিক দক্ষতা বিবেচনায় জনপ্রতিনিধির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে এই ওয়ার্ডটিতে উঠে আসেনি বিকল্প ভালো কোনো নেতৃত্ব। এই ওয়ার্ডে বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে নির্বাচিত হয়ে আসছেন খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন হিরণ। মাঝে একবার সামান্য ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতের প্রার্থী মাহফুজুল আলম। বর্তমান কাউন্সিলরের মতো যোগ্য নেতৃত্ব এবং জনপ্রতিনিধিত্ব করার মতো শক্তিশালি কোনো বিকল্প নেতৃত্ব উঠে না আসায় এর সুযোগ নিতে চাইছেন কিছু অপরাধ চক্রের পৃষ্ঠপোষকরা। স্থানীয় ভোটারদের দাবি, এবারো নিশ্চিতভাবে বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণই হচ্ছেন এখানকার কাউন্সিলর।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় অধিবাসী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করতে ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মালিক, সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে তরুণ ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুর রহমান এবং এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) যুবলীগ নেতা ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী। তবে কায়সার মালিক ও মো. মাহমুদুর রহমান দৈনিক চট্টগ্রামকে জানিয়েছেন- দল যদি বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণকে মনোনয়ন দেয়, কিংবা তার স্থলে দলের নিবেদিত, সৎ, সাদা মনের কর্মীবান্ধব কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। কিন্তু যদি কোনো মাদক ব্যবসায়ী, পতিতা ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং পরিচালনাকারী ও সন্ত্রাসীদের গডফাদারকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে হলেও নির্বাচন করবো। এই ওয়ার্ডে কখনো কোনো খারাপ ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হতে পারেনি, আগামিতেও হতে পারবে না।

ওয়ার্ডের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হতে যাচ্ছে শেখ রাসেল শিশু পার্ক।

আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী গত এক বছর ধরে ওয়ার্ডে সরব রয়েছেন, করছেন গণসংযোগ, কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে লাগিয়েছেন পোস্টার। বিভিন্ন দিবস ও বিশেষ কর্মসূচিতে এলাকায় শো-ডাউন করলেও শো-ডাউনের অগ্রভাগে ওয়ার্ডের বাইরের ছেলেদের দেখা যাওয়ার পাশাপাশি দেখা গেছে বিএনপি ও জামায়াতের চিহ্নিত অনেক নেতা ও কর্মীকে- যারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত বলে দলটির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। তার গণসংযোগ ও বিভিন্ন সভা-মিছিলে দেখা গেছে দুর্ধর্ষ অনেক মামলার আসামি ও ক্যাডারদের- এমন অভিযোগ খোদ স্থানীয় ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা, মাদক ব্যবসা, পতিতা ব্যবসা, কিশোর গ্যাং ও নানান সামাজিক অপরাধে পৃষ্ঠপোষকতার নানান অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে, খোদ স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদবীধারী নেতা-কর্মীরাও তা স্বীকার করে বলেছেন- আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক বিভিন্ন এজিন্সির প্রতিবেদনেও তার বিরুদ্ধে নানান অপরাধের তথ্য উঠে এসেছে।
তবে ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলেই কেবল নির্বাচন করবেন। তিনি নির্বাচিত হলে নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে ৮ দফা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন। অন্যদিকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে এসব ষরযন্ত্র বলে দাবি করে বলেছেন, এখানকার মানুষ পরিবর্তন চায়। আমি আমাদের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীনের নির্দেশে তরুণ প্রজন্মের পক্ষে পরিবর্তনের অঙ্গীকারে কাজ করতে মাঠে নেমেছি।
অন্যদিকে এই ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা বিএনপি ও তার দলের নেতা-কর্মীরা। হামলা-মামলা আর ক্ষমতাসীনদের একক আধিপত্যে একসময়ের বিএনপির দূর্গবলে খ্যাত এই ওয়ার্ডে নির্জীব দলটির নেতা-কর্মীরা। এই ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সহ-সভাপতি এস কে খোদা তোতনসহ বেশকিছু নগর নেতা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের সাথে আঁতাত করে চলার অভিযোগ রয়েছে নেতা-কর্মীদের। ফলে এখানে নির্বাচন করতে কেউ আগ্রহী নন। এরপরেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করবেন বলেন জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুলাল। তিনি বলেন, দল নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। নির্বাচনে জয়লাভ করলে মাদক নির্মূল, ভাসমান জনগণের পুনর্বাসন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করবেন।

ডিসি/এসআইকে/ইউএস