মাহে রমজান এলো বছর ঘুরে

                            মাহে রমজান এলো বছর ঘুরে
                                                    কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। কালের পরিক্রমায় মুসলিম উম্মাহ্’র কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বার্তা নিয়ে প্রতিবছরই শুভাগমন করে পবিত্র মাহে রমজান। এবার এমন এক সময়ে বরকতের এই মাসটি আমাদের সামনে হাজির হয়েছে যখন বিশ্ব মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত। অগণিত বনি আদম এই জীবাণুর থাবায় মৃত্যুবরণ করেছেন। লক্ষ লক্ষ লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পবিত্র মাসটিতে দুর্যোগের এই কঠিন সময়ে আমরা যেন ইবাদত বন্দেগি করতে পারি সে প্রার্থনাই করছি মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে। কামনা করছি আল্লাহ যেন রহমতের এই মাসের বদৌলতে মহামারি করোনা থেকে আমাদেরকে মুক্তি দেন।
রমজানের আগমনের কারণে মুসলিম সমাজ ও ইসলামী জীবন ধারায় এক বিরাট সাফল্যের সৃষ্টি হয়। ইবাদাত-বন্দেগীর এক মোক্ষম সময় এই মাহে রমজান। এ মাসে একজন মুসলমান তার পরবর্তী জিন্দেগী কিভাবে সৎ ও সুন্দরভাবে কাটাতে পারে তার প্রশিক্ষণ নেন। এ মাসেই নাজিল করা হয় মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন। মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখব’- সূরা বাকারাহ্।
প্রতিবছর রমজান মাস আমাদের মাঝে আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু আমরা নিজেদের কতটুকু সংশোধন এবং নিজেদের ঈমান, আখলাক তরতাজা করতে সমর্থ হই তা বলা কঠিন। অন্যমাসে আমরা অনেকেই যেভাবে বেপরোয়া ও নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে চলি; সে সব আচরণ কি এই পবিত্র মাসে বর্জন করতে সক্ষম হই? আবার অনেকের ধারণা, রমজান মাসেই ভালো হয়ে চলার চেষ্টা করলে হবে। এ ধরনের মনমানসিকতা ভুল। আমরা যদি ইসলামের সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করে চলতে চাই তাহলে রমজানে যে ভালো কাজ ও ইবাদত-বন্দেগীর অভ্যাসগুলো গড়ে উঠবে তা পরবর্তী মাস এবং দিনগুলোতেও অনুসরণ করতে সমস্যা থাকার কথা নয়। প্রয়োজন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন।
রমজান মাস এমনই গুরুত্বপূর্ণ মাস যার পুরস্কার মহান আল্লাহ নিজে এর প্রতিদান দেবেন। হাদীসে এসেছে ‘কেবল সাওম
ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার জন্য, সাওম আমার জন্য আমি নিজে এর প্রতিদান দিব’- সহিহ বুখারী। এ মাসের একটি ফরজ ইবাদাত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমতুল্য। আর রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে বেশি ঘ্রাণযুক্ত। মাহে রমজানে রয়েছে মানবজাতির জন্য আল্লাহ তা’আলার অফুরন্ত দয়া, ক্ষমা এবং জাহান্নাম থেকে নাজাতের প্রতিশ্রুতি। এ মাসেই রয়েছে মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বাদর যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
তাক্বওয়া অর্জনের মাস মাহে রমজান। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার’ -সুরা বাকারাহ। এ কারণেই এই পুণ্যের মাসে আমরা নিজেদেরকে একজন মুত্তাকী ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। এ রমজান মাস আমাদের জন্য কিয়ামতে সুপারিশ করবে। হাদীসে বর্ণিত, ‘কিয়ামতের দিনে সাওম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে’- মুসনাদে আহমদ।
নেকে আছেন যারা পবিত্র এ মাসটিতেও অন্য মাসের খারাপ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে পারেন না। এমনকি রোযা পালনের ক্ষেত্রেও গাফেলতি করে। এ মাস আমাদের কাছে মেহমান হিসেবে তাশরীফ আনে। মেহমানের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া উচিত। বছর পরিক্রমায় যে পবিত্র মাসটি আমাদের কাছে আসে তাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পাপমোচন আর সৎকাজ করার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে পবিত্র রমজান। এক অনাবিল শান্তি ও চিরস্থায়ী মুক্তির পয়গাম নিয়ে এলো মাহে রমজান। আর রোজা ইসলামের মৌলিক ইবাদতের মধ্যে অন্যতম- যা আমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তুমি এ মাসকে আঁকড়ে ধরে পূর্ণ মুমিন হিসেবে নিজেকে তৈরির তাওফিক দিও। রমজানের কারণে হলেও তুমি মহামারি করোনা থেকে আমাদের রক্ষা করো। তুমি ছাড়া যে আর কেউ নেই আমাদের বাঁচাবার। পবিত্র এ মাসকে জানাই স্বাগতম। স্বাগতম হে মাহে রমজান।

                                                                                                – লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক