কঠিনে হেসে-খেলে জয় বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
ওয়ানডে সুপার লিগের ৩০ পয়েন্ট অর্জনের লক্ষ্যে শুরুটা হলো প্রত্যাশা মতোই।  প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে সহজেই ১৫৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।  কঠিন করে ফেলা ম্যাচটিকে হেসে-খেলেই নিজেদের করে নিয়েছে টাইগার বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) হারারেতে ২৭৭ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার পর ব্যাটিংয়ের কোনো অংশেই মনে হয়নি জিম্বাবুয়ে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।  বরং বাংলাদেশের বোলিংয়ে নতমুখে একের পর এক সাজঘরে ফিরেছেন ব্যাটসম্যানরা।  লিটন দাসের ম্যাচসেরা ইনিংসের পাশাপাশি ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ থাকা সাকিব এই জয়ের মূল কারিগর।  সাকিবের ৫ উইকেটের কল্যাণে জিম্বাবুয়ে ২৮.৫ ওভারে ৯ উইকেটে থেমেছে ১২১ রানে।  শেষ ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে থাকায় স্বাগতিকদের ইনিংস শেষ হয়েছে এখানেই।
ভালো লেন্থের বলে শুরু থেকেই বাংলাদেশি পেসারদের সামনে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল স্বাগতিকদের।  তাতে আসে সফলতাও।  অভিষেকেই ডাক মেরে ফিরেছেন মারুমানি।  সাইফউদ্দিনের ভালো লেন্থের বল কাট করতে গিয়েছিলেন।  বল ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে।  পঞ্চম ওভারে উইকেট উৎসবে যোগ দেন পেসার তাসকিন আহমেদও।  তার বলে মিডল স্টাম্প উপড়ে যায় ৯ রানে ব্যাট করতে থাকা ওপেনার মেধেভেরের।
ডিয়োন মায়ার্স অবশ্য অধিনায়ক টেলরকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতে মনোযোগী ছিলেন।  কিন্তু যে শটে আউট হলেন, সেটাকে দুর্ভাগ্য বলতেই হবে।  শরিফুলের বল পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ধরা পড়েন মোসাদ্দেকের হাতে।  ২৪ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৮ রান করেছিলেন অভিষিক্ত মায়ার্স।
‘টপ এজ’ ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা ব্রেন্ডন টেলরকেও।  দৃঢ়চেতা মনে হলেও সাকিবের ঘূর্ণিতে খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন।  স্লগ সুইপ করতে গিয়েই বল টপ এজ হয়ে জমা পড়ে তাসকিনের হাতে।  মাইলফলকের ম্যাচটা তাতে রাঙানো হলো না তার।  ফিরে গেছেন ২৪ রানেই।  তার উইকেট নিয়েই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে যান সাকিব।  টপকে যান মাশরাফি বিন মুর্তজাকে।
এরপর অনেক কিছু নির্ভর করছিল রায়ান বার্ল ও চাকাভা জুটির ওপর।  তাতে হতাশই করেছেন বার্ল।  ১৭ বল খেলে ৬ রানে ক্যাচ উঠিয়ে দেন আফিফ হোসেনকে।  মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলা জিম্বাবুয়ে এরপর উইকেট হারাতে থাকে একের পর এক।  রান-আউটে বিদায় নেন লুক জঙ্গুই, ব্লেসিং মুজারাবানিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় উইকেট পকেটে পুরেন সাকিব।
অপর প্রান্ত আগলে চাকাভা হাফসেঞ্চুরি তুললেও হারের ব্যবধান কমানো ছাড়া সেটি আর কোনো ভূমিকা রাখেনি।  হাফসেঞ্চুরিয়ান এই কিপারকেও মেহেদীর তালুবন্দি করিয়েছেন সাকিব।  এরপর রিচার্ড এনগারাভাকে গ্লাভসবন্দি করিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংসটাই শেষ করে দিয়েছেন তিনি।  ব্যাট হাতে দুঃসময় কাটানো এই অলরাউন্ডার বল হাতে পুষিয়ে দিলেন সব অপূর্ণতা।  ৯.৫ ওভারে ৩ মেডেনে ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।  একটি করে নিয়েছেন তাসকিন, সাইফউদ্দিন ও শরিফুল।
অথচ টস হেরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা দেখলে যে কেউই বলবে- এই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে অসাধারণভাবেই।  স্বাগতিক বোলারদের সামনে টপ-অর্ডারের ব্যর্থতায় লিটন দাস নিজের স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে সময়োপযোগী এক ইনিংস খেলেছেন।  ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে সামনে পেয়ে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি।  আর তার সেই ইনিংসটাতেই বাংলাদেশ পায় লড়াই করার মতো পুঁজি।  জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে করেছে ২৭৬ রান।  তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানদের ব্যর্থতার ভিড়ে এক প্রান্ত আগলে রেখে লিটন খেলেছেন ১০২ রানের ঝলমলে ইনিংস।  শেষ দিকে আফিফ হোসেনের (৩৫ বলে ৪৫) ঝড় ও মেহেদী হাসান মিরাজের (২৫ বলে ২৬) কার্যকরী ব্যাটিংয়ের আগে মাহমুদউল্লাহর (৫২ বলে ৩৩) লড়াকু ব্যাটিংই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসের হাইলাইটস।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ৫১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন লুক জঙ্গুই।  দুটি করে নিয়েছেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগারাভা।  একটি নিয়েছেন টেন্ডাই চাতারা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ