সান্ত্বনার জয় অস্ট্রেলিয়ার

ক্রীড়া ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সিরিজ নিশ্চিত হয়েছে গতকালই। তবুও আরেকটা মিশন ছিল বাংলাদেশের।  অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের সঙ্গে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দও মিলিয়ে নেওয়ার।  কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। বাংলাদেশে এসে টানা তিন টি-টোয়েন্টি হারা অস্ট্রেলিয়া অবশেষে পেলো জয়ের দেখা।  আজ (শনিবার) চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে সফরকারীরা ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশকে।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ মোটেও সুবিধা করতে পারেনি।  ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে করতে পারে ১০৪ রান।  সহজ এই লক্ষ্য সহজে পার হতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।  ১৯ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে ম্যাথু ওয়েডরা।  অস্ট্রেলিয়া জিতলেও সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলো ৩-১ ব্যবধানে।
ব্যাটসম্যানদের কারণেই আসলে প্রথম হার দেখতে হলো বাংলাদেশকে।  একই সঙ্গে সাকিব আল হাসানের ৫ ছক্কাও বড় টার্নিং পয়েন্ট ম্যাচের।  ওই ওভারে ৩০ রান না এলে দৃশ্যপট অন্যরকম হতেই পারতো।  তার এক ওভারে পাঁচ ছক্কা মেরেছেন ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান।  যদিও এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ম্যাচ মোড় নিয়েছিল।  ম্যাচে ফেরা বাংলাদেশ মিচেল মার্শকে তুলে নিয়ে এলোমেলো করে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ।  কিন্তু অ্যাশটন অ্যাগারের ২৭ বলে ২৭ রান এবং অ্যাশটন টার্নার (৯*) ও অ্যান্ড্রু টাইয়ের (৪*) ফিনিশিংয়ে জয় নিশ্চিত ‍করে অস্ট্রেলিয়া।
অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড আজও হতাশ করেছেন।  প্রথম ওভারেই তিনি ফিরে যান মেহেদী হাসানের শিকার হয়ে।  এরপর ক্রিজে আসেন ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান।  ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়েই ঝড় তোলেন মিরপুরের ২২ গজে। সাকিরের এক ওভারে মারেন ৫ ছক্কা।  তার এই ঝড়ের মাঝেই বাংলাদেশ ক্যাম্পে স্বস্তি ফেরান নাসুম আহমেদ।  এই স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান ৫ রান করা ওপেনার বেন ম্যাকেডারমট।
তার বিদায়ের পর মোস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ারে ধরাশরী ক্রিস্টিয়ান।  এক ওভারে ৩০ রান করা এই ব্যাটসম্যান ৩৯ রানে রানে থামেন পয়েন্টে শামীম হোসেনের ক্যাচ হয়ে।  তবে আউট হওয়ার আগে মাত্র ১৫ বলে ১ চার ও ৫ ছক্কায় খেলে যান ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস।  মিরপুরে যে টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলছে, সেই আমেজ প্রথমবার টের পাওয়া যায় তার ব্যাটিংয়ে!
ক্রিস্টিয়ানের ব্যাটে দারুণ ভিত তৈরি হলেও বাংলাদেশ ম্যাচ ফিরতে সময় নেয়নি। ৫ রানের মধ্যে মোয়েসেস হেনরিকস, অ্যালেক্স ক্যারি ও মিচেল মার্শকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। এই ঝড়ের শুরুটা হয়েছিল সাকিব ৪ রান করা হেনরিকসকে রান আউট করলে। খানিক পর ক্যারিকে বাড়তে না দিয়ে প্যাভিলিয়নে পথ দেখান মোস্তাফিজ। আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলেও ক্যারি রিভিউ নিয়েছিলেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি, ৬ বলে ১ রান করে ফেরেন প্যাভিলিয়নে।
তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব হয়েছে একটু পর, যখন মেহেদী হাসানের বলে বোল্ড হয়ে যান ফর্মে থাকা মার্শ। এবারের সিরিজে ব্যাটিংয়ে বলতে গেলে অস্ট্রেলিয়াকে একা টেনে নেওয়া মার্শ ১৫ বলে ১১ রান করে ফেরেন, যাতে ছিল একটি বাউন্ডারির মার।
তবে অ্যাগারের চমৎকার ব্যাটিংয়ে জয়ের পথ তৈরি হয় সফরকারীদের। যার আনুষ্ঠানিকতা দিয়েছেন টার্নার ও টাই।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার মোস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসার ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। মেহেদী হাসান ৪ ওভারে ১৭ রান খরচায় পেয়েছেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট শিকার নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের।
এর আগে ব্যাটিংয়ে বাজে দিন পার করেছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, শেষ দুই ম্যাচে ব্যাটিং ভালো হবে। যদিও তার কথার উল্টোটা ঘটলো চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজে সবচেয়ে বাজে ব্যাটিং হলো আজ (শনিবার)। অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের সামনে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১০৪ রান করতে পারে বাংলাদেশ।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। তবে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশা থেকেই গিয়েছিল। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও জানিয়েছিলেন, ব্যাটিং ভালো করতে হবে। মাহমুদউল্লাহর বিশ্বাস ছিল, শেষ দুই ম্যাচে জ্বলে ‍উঠবেন ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু আজ চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে চলতি সিরিজের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স হলো ব্যাটসম্যানদের।
আবারও ব্যর্থ হয়েছেন সৌম্য সরকার (৮)। রানের খাতা খুলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান সোহান। ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি সাকিব আল হাসান (১৫)। সর্বোচ্চ ২৮ রান এসেছে নাঈম শেখের ব্যাট থেকে। আফিফ হোসেনের ১৭ বলে ২০ ও মেহেদী হাসানের ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংস দুটিতে ১০০ ছাড়ায় বাংলাদেশের স্কোর।
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল বোলার মিচেল সুয়েপসন। এই স্পিনার ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। তার সমান ৩ উইকেট পেতে অ্যান্ড্রু টাই ৩ ওভারে খরচ করেছেন ১৮ রান। জশ হ্যাজেলউড ৪ ওভারে ২৪ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০৪/৯ ( নাঈম ২৮, মেহেদী ২৩, আফিফ ২০, সাকিব ১৫; সুয়েপসন ৩/১২, টাই ৩/১৮, হ্যাজেলউড ২/২৪, অ্যাগার ১/২২)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৯ ওভারে ১০৫/৭ ( ক্রিস্টিয়ান ৩৯, অ্যাগার ২৭, মার্শ ১১; মোস্তাফিজ ২/৯, মেহেদী ২/১৭, শরিফুল ১/৮, নাসুম ১/১৭)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মিচেল সুয়েপসন।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ