বজ্রপাতে নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্র

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বজ্রাঘাতে শুধু মানুষের প্রাণহানি হয় না, নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি।  সচেতন না হওয়ায় এই ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।  ঘরে থাকলে বজ্রাঘাতে জীবন যাওয়ার ভয় নেই।  তবে বজ্রপাতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিকল হচ্ছে।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বজ্রপাতের সময় টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল, ল্যাপটপ, ওয়াইফাই’র বৈদ্যুতিক সংযোগ খুলে রাখলেই এগুলোকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।
শান্তিনগরের ব্রডব্যান্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান অন্তরঙ্গ ডটকমের কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহের ভারী বৃষ্টি আর বজ্রপাতের পর তাদের প্রায় ৪০টি সুইচ বক্স পুড়ে গেছে।  আর তাদের গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ১৫ জনের বাসার রাউটার জ্বলে গেছে।  এমন ঘটনা আরও বেশ কিছু এলাকায় ঘটেছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
যত দিন যাচ্ছে মানুষের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে।  আগে উচ্চবিত্তদের ঘরে নানা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি দেখা গেলেও আজকাল উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও সময়ের প্রয়োজনে বহু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যেমন- এসি, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ডিপ ফ্রিজ ব্যবহার করছেন।  এখন আবার প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং করোনা সংক্রমণের কারণে অনলাইনে ক্লাস করা থেকে শুরু করে সিনেমা নাটক সবই চলে ব্রডব্যান্ড লাইন দিয়ে।  তাই বেড়েছে ওয়াইফাইয়ের ব্যবহারও।  বজ্রপাতের সময় এসব যন্ত্রপাতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
কাকরাইলের এক বাসিন্দা সুশান্ত পাল জানান, গত দুই সপ্তাহে তার তিনটা রাউটার জ্বলে গেছে।  আসলে কীভাবে এগুলো জ্বলে যায় সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই কারও।  কেউ বলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে রাখবেন, তাতেই হবে।  আমার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল, তাও জ্বলে গেলো।  ব্রডব্যান্ডের লোক এসে বলে গেলো ইন্টারনেটের সংযোগও খুলে রাখতে হবে।  একেকজন একেক কথা বলে।  আসলে এ বিষয়ে এখন একটি নিদিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা দরকার।  নইলে অর্থনৈতিক ক্ষতি তো হতেই থাকবে।
এদিকে নষ্ট যন্ত্রপাতি ঠিক করে ফকিরাপুলের এমন এক দোকানে খোঁজ নিলে সেখানকার মালিক সোহেল জানান, এই সময় যে পরিমাণ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয় তা অন্য সময় হয় না।  এই সময় প্রায়ই লোকজনের ফ্রিজ জ্বলে যায়, টিভি জ্বলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে।
ওয়াইফাই এক ধরনের তারহীন ইন্টারনেট সংযোগ।  এটি কাজ করে রাউটারের সাহায্যে।  এই রাউটার চলে বিদ্যুৎ-সংযোগে।  বজ্রপাতের সময় সাধারণত রাউটার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগে বজ্রপাত ঘটলে আমাদের ডিভাইসগুলো অতিরিক্ত চার্জ গ্রহণ করে অকেজো হয়ে যেতে পারে।  এ জন্যই ইউপিএস বা স্ট্যাবিলাইজারের মতো যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে আমরা যন্ত্রগুলো সুরক্ষিত রাখতে পারি।  বজ্রপাতের সময় যাতে ডিভাইসটি বিদ্যুৎ-সংযোগ করা অবস্থায় না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।  এ কারণে বজ্রপাতের সময় রাউটার বন্ধ রাখাই ভালো।  শুধু রাউটার কেন, বাকি সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র প্লাগ থেকে খুলে রাখা নিরাপদ।
একইভাবে বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোনে চার্জ না দেওয়াই ভালো।  ল্যাপটপ চালাতে হলে প্লাগ থেকে খুলে নিয়ে ব্যাটারিতে চালানো নিরাপদ।  যদি সম্ভব হয় টিভির ডিশ সংযোগও খুলে রাখা দরকার।  ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার দিয়ে ফ্রিজ চালানো গেলে ভালো।
বজ্রপাতের সময় যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সুরক্ষিত রাখতে বাসা বা অফিসের কাট-আউট নিরাপদ রাখুন।  নিয়মিত ইলেকট্রিশিয়ান ডেকে সংযোগ পরীক্ষা করে নিন।
এ বিষয়ে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, আমরা বজ্রপাতের কারণে যাতে মানুষ মারা না যায় সে জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করছি।  যেগুলো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও বাঁচাতে পারে।  সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে, বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগেই আবহাওয়া অধিদফতর জানতে পারে কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে।  এ তথ্য মোবাইল ফোনে এসএমএসের অ্যালার্টের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।  বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেমের সব পণ্যে শুল্ক মওকুফ করতে হবে।  সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের নির্দেশ দিতে হবে এবং বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা বা থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন করা যাবে না।  তিনি বলেন, এতে মানুষের জীবন যেমন বাঁচবে, বাঁচবে বৈদ্যুতিক মেশিনও।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ