শিকলে বেঁধে ১৩ সন্তানকে পালনের ভয়াবহ ঘটনা

ঘটনাটি নিয়ে বানানো একটি নাটকের অংশগ্রহণকারীরা।

বিচিত্র বিশ্ব ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বাবা-মা বেশ আদরেই তার সন্তান্দের পালন করে থাকেন।  তাদের ছোট থেকে বড় সব ধরনের চাহিদাই পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন বাবা-মা।  বাড়িতে ছোট বাচ্চারা থাকা মানেই কম-বেশি তারা দুষ্টুমি করবেই।  ঘরের বড়রাও তাদের বকুনি দেয়, অল্প বিস্তর পিটুনিও দেয়।  তবে তা কখনোই অত্যাচারের পর্যায়ে যায় না।
তবে সন্তান পালনের এমন এক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে, যা শুনলে আপনার হৃদয়ও কেঁপে উঠবে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের এক দম্পতি তাদের সন্তানদের শিকলে বেঁধে লালন পালন করতেন।  তাও একজন দুইজন না ১৩ জন ছেলে-মেয়ে, যাদের বয়স ২ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে!
৫৭ বছরের ডেভিড অ্যালান ট্রুপিন ও ৪৯ বছরের লুইস আনা ট্রুপিন এভাবেই লালন পালন করতেন তাদের ১৩ সন্তানকে।  ক্যালিফোর্নিয়ার রিভার সাইড কান্ট্রি শেরিফ ডিপার্টমেন্ট আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে এই ঘটনাটি জানান।
সেই মাধ্যম থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ট্রুপিনদের ১৭ বছরের এক কন্যা কোনোভাবে তাদের সেই বন্দিশালা থেকে পালিয়ে ৯১১ এ ফোন দেয়।  সে দাবী করে তার বাবা মা তাদের শিকলে বেঁধে রাখেন।  কাউকে তো শিকল দিয়ে বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখেন।  বাড়িতে তার আরো ১২ ভাইবোন বন্দি অবস্থায় আছে।
মেয়েটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ ট্রুপিনদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দেখেন ঘটনার তীব্রতা আরো অনেক বেশি।  বিভিন্ন বয়সী অনেকগুলো ছেলে-মেয়েকে অন্ধকার দুর্গন্ধময় জায়গায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।  তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়।  প্রত্যেকেই শীর্ণ দেহী।  যদিও দেখতে সবাইকে শিশুই মনে হয় তবে এদের মধ্যে ৭ জন রীতিমতো প্রাপ্ত বয়স্ক।
পুলিশ ট্রুপিনদের ১৩ জন ছেলে মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।
এদিকে বাড়িটিকে দেখানো হয়েছে একটি দিবা স্কুল হিসেবে যেটার প্রিন্সিপ্যাল ডেভিড ট্রুপিন।  সেই স্কুলটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।  এতে প্রথম থেকে একাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী থাকার কথা বলা হয়েছে এবং সরকারি নথি বলছে এটি একটি সক্রিয় স্কুল।
তবে ট্রুপিনদের প্রতিবেশীরা জানায়, তারা শুধু জানে এই বাড়িতে বিশাল এক পরিবার বাস করে।  কিন্তু সে পরিবারের সদস্যদের তারা সহসা দেখেনি।  কেউ কেউ বলেছেন, তারা সকালে ট্রুপিনদের বাবা-মাকে গ্রেফতার হতে দেখেছে, তখন তারা সন্তানদের দেখতে পেয়েছেন।  সন্তানরা অনেক শীর্ণ ও ফ্যাকাসে দেখতে।
একজন প্রতিবেশী বলেন, এটা খুবই ভয়ংকর আমি এটি বিশ্বাস করতে পারি না!
সন্তানদের এমন নরক জীবনযাপন করতে বাধ্য করেন ডেভিড অ্যালান ট্রুপিন ও লুইস আনা ট্রুপিন।  বাবা-মা কর্তৃক নিয়মিত নির্যাতন ও নির্যাতনের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে তাদের নিজের বাড়িতে অপহৃত জীবনযাপনের ফল ছিল খুবই ভয়ানক।
ডেভিড অ্যালান ট্রুপিন ও লুইস আনা ট্রুপিন জানান, তারা শুধুমাত্র তাদের বাচ্চাদের শৃঙ্খলাবোধ শেখাতে শিকলে বেঁধে দড়ি রাখতেন।  অবশেষে, এই বর্বরতার জন্য তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এই ভয়াবহ ঘটনাটি নিয়ে একটি নাটকও তৈরি করা হয়।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ