সোমবার নির্বাচন : সাতকানিয়ার ৬ ইউপিতে আতঙ্ক ভোটারদের মাঝে

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ১২ টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে সোমবার।  বাকি ৪ টিতে ইতোমধ্যে বিনাভোটে জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা।  নির্বাচন হতে যাওয়া ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ টিতেই প্রার্থীদের সমর্থকেরা সংঘাতে জড়াতে পারে।  তাই সেগুলো ঘিরে যেমন ‘চিন্তায়’ আছে নির্বাচন কমিশন, তেমনি স্থানীয় ভোটাররাও ইতোমধ্যে আতঙ্কে রয়েছেন।  রক্তপাতহীন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই ছয়টি ইউপিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন।  এসব ইউনিয়নে যাতে কোনো সংঘাত না হয় সেজন্য বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সাতকানিয়ার ধর্মপুর, সোনাকানিয়া, খাগরিয়া, বাজালিয়া ইউনিয়নকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।  এই চার ইউনিয়নে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকায় সংঘাত-সংঘর্ষ এমনকি প্রাণহানির সম্ভাবনা আছে।  কাঞ্চনা ও চরতি ইউনিয়নকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।  এই দুই ইউনিয়নেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে।  এসব ইউনিয়নে অধিক সতর্কতা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণাকালে এসব ইউনিয়নে ছোটখাট ঘটনা লেগেই ছিল।  ধর্মপুরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছির উদ্দিন ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে।  খাগরিয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আকতার হোসেন প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘোষণা দেয়ায় এই ইউনিয়ন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে।  সোনাকানিয়ায় গত শুক্রবার রাতে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালানোর ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় সেখানেও সংঘাতের শঙ্কা আছে।  বাজালিয়ায় দুই প্রার্থী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে আছে।  ইতোমধ্যে দুই প্রার্থীই পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে আশঙ্কার জানান দিয়েছেন।  কাঞ্চনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী রমজান আলী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ ছালামের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।  সেখানে জামায়াত সমর্থিত একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকায় ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
চরতিতে প্রচারণা শুরুর পর থেকেই মাঠে নামতে পারেনি মঈনুদ্দিন চৌধুরী।  নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।  সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর শ্যালক মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী এই ইউনিয়নে নৌকা পাওয়ায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে।  সেখানেও ভোটের দিন সংঘাতের শঙ্কা আছে।  এই ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন পুলিশ।
এসবের বাইরেও নলুয়া ইউনিয়নের দুই প্রার্থী লেয়াকত আলী ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর মধ্যে প্রচারণা শুরুর পর থেকে উত্তেজনা চলছে।  লেয়াকত আলীর লোকজন মিজানুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকদের উপর কয়েকদফা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।  এ পর্যন্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও নির্বাচন কমিশনে সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানিয়ে কমপক্ষে ২০টি দরখাস্ত দিয়েছেন মিজানুর রহমান চৌধুরী।  এই ইউনিয়নে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকায় সেখানেও চারটি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাতকানিয়ার ছয়টি ইউনিয়নকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।  সেগুলোতে সংঘাতের ঝুঁকি থাকায় আমরা বাড়তি নজরদারি রাখছি।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আলাদা তৎপরতা থাকবে।  বিনা রক্তপাতে ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে আমরা আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করেছি।  ভোটারদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।  ভোটারদের আমরা নির্ভিগ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি’।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সকল ভোটকেন্দ্রে ছয়জন পুলিশ ও ১৭ জন আনসার, ৫ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৬টি টিম, মোবাইল টিম, ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে।  এছাড়াও সবক’টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৩৬৩ জন পুলিশ মোতায়েন থাকবে।  ভোটাররা স্বতস্ফূর্তভাবেই ভোট দিতে পারবেন’।

ডিসি/এসআইকে/এসইউআর