আন্তর্জাতিক নারী দিবস মঙ্গলবার

ছবি- টাইমস অব ইন্ডিয়া

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
৮ মার্চ; আন্তর্জাতিক নারী দিবস।  নারী অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপি সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়।  জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’।  এই মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘টেকসই আগামির জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’।
এ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশে শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।  এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করছে।  বিভিন্ন কর্মসূচির ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এ উপলক্ষে আগামিকাল মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকাল ৩ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এছাড়াও আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট দিবসের প্রথম প্রহরে অনলাইনে রাতের আঁধার ভাঙার প্রতীকী আয়োজন ও পাশাপাশি হ্যাশট্যাগ (#) ‘আঁধার ভাঙার শপথ’ ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছে।  আমরাই পারি জোটের ৪৮টি জেলার জেলাজোট সদস্যবৃন্দ, নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও আমরাই পারি জোটের চেঞ্জমেকারবৃন্দ এ আয়োজনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও দেশব্যাপি কার্যক্রম ও প্রচারণ অভিযান পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো ফাউন্ডেশন।  আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে সোমবার (৮ মার্চ) সকালে প্ল্যান এর ঢাকা কার্যালয়ে ‘সহিংসতার ভয় আর নয়’ শীর্ষক এই ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়।  মাসব্যাপি এই ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি প্ল্যানের রয়েছে আলোচনা, শোভাযাত্রা ও নানা আয়োজন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ডিআরইউ চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করেছে।  র‌্যালির পরে ডিআরইউ নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নারী দিবসের বিশেষ সংকলন ‘কণ্ঠস্বর’ এর মোড়ক উন্মোচন করার কথা রয়েছে।  এছাড়াও ক্রিশ্চিয়ান উইমেন দিবস উপলক্ষে বুধবার (৯ মার্চ) বেলা ২ টায় ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘উইমেনস ক্যাফে: টেকসই ভবিষ্যতে নারীর অবদান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এদিকে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে নারী দিবস পালন ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নে নানাবিধ কার্যক্রম চললেও থেমে নেই নারীর প্রতি সহিংসতা কিংবা নির্যাতন।  বরং নির্যাতনের ধরণগুলো আরো বেশি নৃসংশ হচ্ছে।  নারীর প্রতি যে কোনো ধরণের নির্যাতনই হলো নারী নির্যাতন।  হতে পারে তা সামাজিক, অর্থনৈতিক, দৈহিক, মানসিক কিংবা যৌন নির্যাতন।  নারী এবং নির্যাতন এই দুটো শব্দ একে অপরের সাথে খুব মিশে গেছে।  নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নানা তৎপরতার পরেও নারীরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, দৈহিক, মানসিক কিংবা যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।  কিন্তু কেন এই নারী নির্যাতন?  নির্যাতনের কারণ হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের মতামত।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপিকা লতিফা কবির বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছেন।  পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এই নির্যাতনের জন্য দায়ী’।
চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, ‘দারিদ্রতা, আইনের অজ্ঞতা এবং যথাযথভাবে আইন প্রয়োগের অভাবের কারণে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে’।
নারী নির্যাতনের কারণ সম্পর্কে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী সাইফুন নাহার খুশী বলেন, ‘নারী নির্যাতনের মূল কারণ হিসেবে আমি মনে করি নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব, আর্থিক অসঙ্গতি এবং বেকারত্ব।  এইসব কারণেই নারী নির্যাতন বাড়ছে’।
চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী শ্যামলী চৌধুরী বলেন, ‘নারী নির্যাতনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যা বলে শেষ করা কঠিন।  তবে নিকৃষ্ট মানসিকতা, অসুস্থ চিন্তা ও অপসংস্কৃতিকে নারী নির্যাতন বৃদ্ধির কারণ মনে করি।  যেমন, যৌতুকের দাবির কারণে নারীরা নির্যাতিত হন, মানবিক বিবেকহীনতার কারণে একজন পুরুষ কোনো নারীকে মানসিক বা যৌন হয়রানী করার মাধ্যমে নির্যাতন করে এবং নারী নিজেকে অসহায় ভেবে প্রতিবাদ না করে নিরব থাকার কারণেও নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে পারে।
তাঁদের মতে, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নারীর ভূমিকা জরুরি।  নারী নির্যাতনের কারণে উন্নয়নের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।  তাই নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হতে হবে।  এই সচেতনতাই নারীকে সকল ধরণের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ