অবৈধ লেন বন্ধ করায় পুলিশ কর্মকর্তার ওপর চড়াও পরিবহন শ্রমিকরা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অবৈধ কারের লেন বন্ধ করে দেয়ার জেরে পরিদর্শক পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর চড়াও হয়েছেন কতিপয় পরিবহন শ্রমিক। এমনকি তাকে ধাওয়াও দিয়েছেন তারা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটি চট্টগ্রাম নগরের আকবর থানার সিটি গেট এলাকায়। ধাওয়ার শিকার পুলিশ কর্মকর্তার নাম মোস্তফা আল মামুন। তিনি নগর পশ্চিম জোনের পরিদর্শক (টিআই-শহর ও যানবাহন) হিসেবে কর্মরত।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কৈবল্যধাম এলাকায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট ফাহিম মৃধা। তিনি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানা অনিয়মে বিভিন্ন গাড়ি বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সেখানে পৌঁছান টিআই মামুন। তিনি সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলছিলেন। বেলা ১১ টার দিকে তাদের পাশে থাকা মাস্কবিহীন এক ব্যক্তিকে টিআই মামুন সরে যেতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে কয়েকজনের সহযোগিতায় পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের ওপর চড়াও হন এবং তাকে ধাওয়া দেন। এরপর সড়কে জড়ো হয়ে কতিপয় শ্রমিক ‘টিআই মামুনের অত্যাচার, মানি না, মানব না’, ‘টিআই মামুনের …, … তালে তালে’ স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে আকবর শাহ থানার অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
টিআই মোস্তফা আল মামুনের দাবি, তিনি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি টিআই সিটি গেট এলাকায় পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) হিসেবে যোগ দেন। যোগ দেওয়ার পরপরই সেখানে থাকা কয়েকটি অবৈধ কারের লেন, অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার লেন বন্ধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় লেনগুলো ঘিরে চাঁদাবাজি করা কয়েকজন। তারা টিআই মামুনের পেছনে লেগে যান। তিনি যেখানে ডিউটি করেন সেখানে কয়েকজন সবসময় জড়ো হয়ে থাকছিল। সুযোগ পেয়ে আজ (সোমবার) এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সিটি গেট এলাকায় একটি অবৈধ কার এবং একটি অবৈধ অটোরিকশার লেন ছিল। টিআই মামুন দায়িত্বগ্রহণের পর এ দুটি লেন বন্ধ হয়েছে।
জানতে চাইলে টিআই মোস্তফা আল মামুন বলেন, ‘আমার পেছনে অবৈধ লেন ঘিরে চাঁদাবাজি করা কয়েকজন লেগেছিল। আজকে তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি’।
পরিবহন শ্রমিকদের চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কোনো প্রমাণ দিতে পারলে আমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেব। আমি চাঁদাবাজি না করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ।’
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন জানান, ‘আজ বেলা ১১ টার দিকে কৈবল্যধাম মন্দিরের পাশে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকের বাকবিতণ্ডা হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। সম্ভবত মামলা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ দেননি’।
নগর ট্রাফিক পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) তারেক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘টিআই মামুন অবৈধ কিছু লেন বন্ধ করেছেন। এজন্য একটি মহল তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আজকের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

ডিসি/এসআইকে/আরসি