উদ্ধারের আগে যেভাবে তারা কাটিয়েছে ৩৪ দিন

উত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
গত ২৩ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিনে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি না ফিরে প্রথমে সীতাকুণ্ড পৌরসদর এলাকায় গিয়ে একটি সেলুন দোকানে যায় অর্পা ও তামান্না। এরপর প্রথমে অর্পা চুল কেটে ফেলতে চায়। কিন্তু তামান্না বলে- না আমি চুল কেটে পুরুষ সাজবো। পরে তামান্না চুল কেটে পুরুষ সাজে। আর অর্পা থাকে মেয়ে। তারপর তারা দু’জনই পৌরসদর বাস স্টেশন থেকে বাসে চড়ে কুমিল্লা জেলা শহরে নেমে দেবিদ্বার থানাধীন বাগুরা শান্তি নগর এলাকায় অবস্থান করেন। পরে এক লোককে তারা পরিবারের অমতে বিয়ে করেছে বলে জানালে তিনি তাদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একটি বাসা ভাড়া করে দেন এবং পুরুষ বেশে তামান্নাকে একটি মিষ্টির দোকানে চাকুরি দেন। চাকুরি শেষে তামান্না বাজার নিয়ে ঘরে আসলে অর্পা তা বাসায় রান্না করতো। এভাবেই চলে তাদের এক মাস তিন দিনের নিখোঁজ জীবন।
এদিকে সীতাকুণ্ড থানায় ছাত্রীদ্বয়ের পরিবারের পক্ষে সাধারণ ডায়েরী করার পর থেকে ছায়া অনুসন্ধানে নামে র‌্যাব-৭। তারা সম্ভ্যাব্য স্থানগুলোতে ব্যাপক নজরদারি রাখতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে টেলিভিশন, জাতীয়-আঞ্চলিক পত্রিকায় সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর বাড়ির মালিকের দৃষ্টিগোছর হয়। তিনি অনেকটাই গোপনে স্থানীয় প্রতিনিধিদের অবগত করেন পুরো বিষয়টি। এরই প্রেক্ষিতে দুই ছাত্রীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে র‌্যাব। তারা কুমিল্লার সেই বাড়িওয়ালার সাথে যোগাযোগ করেন। সর্বশেষ গত রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে অভিযান চালিয়ে দুই ছাত্রীকে উদ্ধার করে র‌্যাব-৭।
পরে ভিকটিমদের সাথে কথা বলের‌্যাব জানতে পারে-‘এসএসসি পরীক্ষার পর তাদের বাবা-মা তাদেরকে জোরপূর্বক বাল্য বিবাহ দিয়ে দিবে- এই বিষয়টি তারা জানতে পারে। সে জন্য তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। তাদের একজন তামান্না চুল কেটে স্বামী আর অর্পা স্ত্রী সেজে দীর্ঘ ৩৪ দিনের ব্যতিক্রম জীবনযাপন করতে থাকে। তাদের পালানোর পেছনের উদ্দেশ্য ছিল- তারা বিয়ে নয়, আরো পড়ালেখা করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আর সেই লক্ষ্যেই তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
উদ্ধারকৃত দুই শিক্ষার্থীকে সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।
এ বিষয়ে তামান্না’র মা বলেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই আমি আমার মেয়েকে র‌্যাবের মাধ্যমে ফিরে পেয়েছি। তবে আমার মেয়ে যে বাল্য বিবাহের কথা বলছে তা সত্যি না। কারণ তার জন্য কোনো বিয়ের প্রস্তাব আসেনি। বিয়ের কথা আসবে কেন? আমি অনেক কষ্ট করে স্বামী হারা সংসারে আমার মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছি’।
উপজেলার কুমিরা মসজিদ্দা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অর্পা ও তার পরিবারের কাউকে না পেলেও তামান্নার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় উৎসক জনতার ভিড়। এ বিষয়ে তামান্না জানান, ‘সীতাকুণ্ড পৌরসদর বাজার থেকে চুল কেটে পুরুষ সেজে কুমিল্লা গিয়ে এক লোকের মারফতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে প্রথমে বাসা ভাড়া নিই। পরে উনার সহযোগিতায় আমি একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করি। আর অর্পা বাসায় থেকে রান্না-বান্না করে। এভাবেই চলছিল আমাদের এক মাস। এখন আমরা বুঝতে পেরেছি, যেটা আমরা করেছি খুবই অন্যায় কাজ করেছি’।
র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী (মিডিয়া) নিয়াজ মোহাম্মদ চপল বলেন, ‘আমরা নিখোঁজ দুই ছাত্রীকে সীতাকুণ্ড থানায় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে থানার মাধ্যমে দুই মেয়েকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি’।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ