আদালতে যাচ্ছেন চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন।  তিনি আশা করছেন, উচ্চ আদালতে সুবিচার পাবেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫৪ (২) ধারায় চাকরিচ্যুত করা হয়।  বেশ কয়েকটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কমিশন।
এর আগে দুদক আইনের একই ধারায় দুজনকে অপসারণ করা হয়।  তাদের একজন হাইকোর্টে ধারাটি চ্যালেঞ্জ করলে আদালত তা অবৈধ ঘোষণা করেন।  পরে দুদক আদেশের বিরুদ্ধে আপিল অনুমতির আবেদন করে এবং তা এখনো শুনানির অপেক্ষায়।
দুদকের তোলা অভিযোগের বিষয়ে গতকাল শরীফ উদ্দিন দাবি করেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছি তাদের তদবিরে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে’।  তিনি বলেন, ‘আমাকে চাকরিচ্যুত করার জন্য কিছু অভিযোগ দেখালেও অপসারণের নেপথ্যে ছিলেন দুর্নীতিবাজরা।  দুদকে আমি প্রতিটি অভিযোগের জবাব দিলেও আমার কোনো বক্তব্য আমলে নেওয়া হয়নি।  বরং সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ধারা ব্যবহার করে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে’।
কক্সবাজারে জব্দ করা ৯৩ লাখ ৬০ টাকার চালান রাষ্ট্রীয় কোষাগার অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখার বিষয়ে শরীফ উদ্দিন বলেন, ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে দুজন সার্ভেয়ারের বাসা থেকে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাত বস্তা আলামতসহ ওই অর্থ উদ্ধার হয়।  ওই অর্থ ও আলামত তিনি জব্দ করেননি।  পরদিন মামলার দায়িত্ব পেলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আরাফাতের কাছ থেকে তিনি ওই অর্থ বুঝে নেন।  ঝুঁকি নিয়ে সেই অর্থ তিনি চট্টগ্রাম দুদক অফিসে নিয়ে আসেন।
শরীফ উদ্দিন দাবি করেন, তিনি তদারককারী কর্মকর্তা মাহবুবুল আলমের পরামর্শে ওই অর্থ অফিসের আলমারিতে রাখেন ও বিষয়টি পরিচালককে মৌখিকভাবে জানান।  জব্দ করা মালপত্র তদন্ত কর্মকর্তা নিজের কাছে রাখেন- এমন নজির দুদকে প্রচুর আছে।  আলামতের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে তাদের অফিসের কোষাগারে জমা রাখবেন কিনা দ্বিধায় ছিলেন।  চট্টগ্রাম থেকে বদলি হওয়ার সময় তিনি ওই টাকা বুঝিয়ে দিয়ে আসেন।
পটুয়াখালীতে বদলির আদেশ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা ও এক মাস পর যোগদানের অভিযোগ প্রসঙ্গে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছরের জুন থেকে দেশে কঠোর বিধি-নিষেধ ছিল।  অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হই।  সেই সনদ আমি দুদকে জমা দিয়েছি।  ওই সময় আমিসহ ২১ জনকে বদলি করা হয়।  আমরা সবাই ১৪ জুলাই যোগদান দেখিয়ে ডাকযোগে আর্টিকেল ৪৭ পাঠাই।  সবাই একই তারিখে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিই।  কর্তৃপক্ষ অন্য কাউকে শোকজ না করে শুধু আমাকে শোকজ করে’।
সদ্য চাকরিচ্যুত এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দেরিতে অফিসে যোগদানের কারণ দর্শানোর জবাবে অসুস্থতার প্রত্যয়নপত্র দাখিল করি।  করোনায় আক্রান্ত থাকায় দুদকের উপপরিচালক (মানবসম্পদ) মো. রফিকুল ইসলামের নির্দেশে ১৪ জুলাই ই-মেইলে আমার যোগদানপত্র পটুয়াখালীর অফিশিয়াল ই-মেইলে পাঠাই।  বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস অনুযায়ী, অনিবার্য কারণবশত বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান কাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত হতে পারে’।
নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার আড়াই মাস পর পুরনো কর্মস্থলের নথিপত্র হস্তান্তরের অভিযোগ প্রসঙ্গে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে প্রায় ১৩০টি নথি ছিল।  এগুলোর চালান ও সিডি প্রস্তুত সময়সাপেক্ষ।  আমি পটুয়াখালীতে যোগদানের পর কর্মস্থল না ছাড়ার বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা ছিল।  এছাড়া গত বছরের ১০ জুন থেকে দুদকের চট্টগ্রাম-২ অফিসের ফটোকপি মেশিন নষ্ট ছিল’।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৃথক ছয় ব্যক্তির কাছে ঘুষ দাবি, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘যে ছয় ব্যক্তিকে অভিযোগকারী বলা হচ্ছে, তারা সবাই আমার অনুসন্ধানে অভিযুক্ত ও মামলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।  তাদের অভিযোগের বিষয়ে আমি দুদকে বক্তব্য দিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি।  কিন্তু জবাব যাচাই-বাছাই না করে ও অভিযোগ প্রমাণের আগেই কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই আমাকে অপসারণ করা হয়েছে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ